Close Ad close
Breaking
Fri. May 10th, 2024

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ : জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটি প্রধানত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই রাজ্যের দক্ষিণে ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্যদুটি অবস্থিত। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উত্তরে ও পূর্বে চিন অবস্থিত। এই রাজ্যের পশ্চিমে ও উত্তরপশ্চিমে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে কাশ্মীরের পাকিস্তান-অধিকৃত অংশ ও গিলগিট-বালটিস্তান অবস্থিত। জম্মু, কাশ্মীর উপত্যকা ও লাদাখ – এই তিন অঞ্চল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি গঠিত।

  জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাস, নদী, পাহাড়, ঐতিহাসিক স্থান, জনসংখ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।

জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কে কিছু তথ্য (Facts About Jammu and Kashmir in Bengali)

ভারতের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir)
রাজধানী শ্রীনগর ( গ্রীষ্মকালীন ) , জম্মু ( শীতকালীন )
জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার
নারী / পুরুষ ৮৮.৩ / ১০০
আয়তন ২২২২৩৬ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ১২৪
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৩.৭১ শতাংশ (২০০১-২০১১)
সাক্ষরতার হার ৬৮.৭৪ শতাংশ
প্রধান ভাষা উর্দু (এছাড়াও কাশ্মীরি , লাডাকি , ডোগরি , পাঞ্জাবি , হিন্দি ও ইংরেজির চল আছে)
আবহাওয়া শীতকালে তাপমাত্রা ০.৯ থেকে ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে ।
গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১০৫ সেমি

জম্মু ও কাশ্মীর এর ইতিহাস (Jammu and Kashmir History in Bengali) :

 দীর্ঘ ঘাত – প্রতিঘাতের পর মোগল সম্রাটের হাতে আসে ভারতের মাথার মণি কাশ্মীর রাজ্য এবং সেই সাম্রাজ্যের পতনের ( ১৭৫৬ ) পর বেশ কয়েক দশক স্বাধীন ছিল এই রাজ্য । সেই থেকেই স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্য এই উপত্যকার মানুষের । ১৭৫৬ থেকে ১৮১৯ পর্যন্ত সর্বাঙ্গীন সুন্দর এই রাজ্য স্বাধীন ছিল , নিজের মতো । কিন্তু গোল বাঁধে ঠিক তারপরেই । কাশ্মীর তখন কাবুলের দখলে । দূর থেকে আগত কাবুলিদের দখল কেন সহ্য করবেন পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাবের রাজা রণজিৎ সিংহ । কাবুলিদের হটিয়ে ভুস্বর্গের ওপর দখল নিলেন তিনি । আবার ক্ষমতা হাত বদল হল ১৮৪৬ – এ । পাঞ্জাবের রাজাকে পরাজিত করে শাসকের স্থান দখল করল ব্রিটিশরা । কাশ্মীর থেকে শিখ রাজাদের অপসারণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করেছিলেন জম্মুর রাজা গুলাব সিং । তাঁর সাহায্যে ইংরেজরা খুশি হয়ে অমৃতসর সন্ধি অনুসারে তাঁকে মাত্র সাত লাখ টাকায় ইজারা দিল কাশ্মীর রাজ্য । এই সময় থেকেই রাজ্যের নাম হল জম্মু ও কাশ্মীর । 

  শুরুতে যে ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে কেবলমাত্র সেখান থেকেই লিখিত হয়নি এ রাজ্যের ইতিহাস । কাশ্মীরের ইতিহাস আরও অনেক পুরানো । বিভিন্ন পুরাণে এ রাজ্যের উল্লেখ মেলে । জানা যায় , প্রজাপতি ব্ৰহ্মা ( কাশ্যপ ) জলোদ্ভব অসুর বধ করে এই রাজ্যের পত্তন করেন । এই কাজে তাকে সাহায্য করেন বিষ্ণু ৩১ ও শিব । অন্য পুরাণে বর্ণিত হচ্ছে , অতীতে সতীসর নামের এইস্থান ছিল জলমগ্ন । দৈত্যদের বসবাস ছিল এই অঞ্চলে । কিছু সাধারণ মানুষের বাস একদা থাকলেও তারা দৈত্যের ভয়ে বাসস্থান পরিত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়েছিল । ফলে সতীসরে অসুর দমন আবশ্যক হয়ে পড়ল । দায়িত্ব নিলেন ব্রহ্মার মানসপুত্র কাশ্যপ । বিশাল সংখ্যক অসুর মৃত্যু বরণ করে মহামুনি কাশ্যপের হাতে । তার হাতে মরতে মরতে একটিও অসুর বাকি থাকে না সতীসরে । পুরোনো বাসিন্দারা ও কিছু নতুন সংখ্যার মানুষ এসে জনপদ গড়ে তোলেন এইস্থানে । নাগরাজ তক্ষকের হাতেজন দায়িত্ব দিয়ে অযোধ্যায় ফিরে যান মুনি । কাশ্যপ মার বা কাশ্যপ মীর থেকেই নাকি এইস্থানের নাম হয়েছে কাশ্মীর । মহাভারতেও জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উল্লেখ মেলে । এখানেই একদা এসেছিলেন রামচন্দ্রের ছোটো ভাই ভরত ও শত্রুঘ্ন । 

জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ :

আপাদমস্তক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য সমুদ্রতট থেকে ১৫৮৫-১৮২৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে । ভারত রাষ্ট্রের উত্তর প্রান্তের এই রাজ্যকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা । পৃথিবীর স্বর্গরাজ্যকে পীরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণি সমতল ভারতের থেকে আলাদা করে রেখেছে । অর্থাৎ রাজ্যের দক্ষিণে রয়েছে পীরপাঞ্জাল । এই পর্বত শৃঙ্গের এপারে রয়েছে ভারত রাষ্ট্রের অন্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশ । দক্ষিণ – পশ্চিম দিক সংযুক্ত রয়েছে পাঞ্জাবের সঙ্গে । দক্ষিণ – পূর্ব তথা সমগ্র পূর্ব ও উত্তরের কিছুটা অংশ জুড়ে রয়েছে চীন অধীনস্থ তিব্বতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত । সীমানার এপারে বেশ কিছুটা অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে কাশ্মীর রাজ্যের লাডাক প্রদেশ । নাঙ্গা পর্বত লাড়াককে তিব্বত থেকে আলাদা করলেও স্থানীয় মানুষের ধর্ম , সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব বর্তমান । রাজ্যের উত্তর দিকের সামান্য অংশের সঙ্গে সীমানা রয়েছে আফগানিস্তানের । বাকি উত্তর ও পশ্চিমের সমগ্রটাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বর্তমান । অবস্থানের দিক থেকে সমগ্র জম্মু – কাশ্মীরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । অদ্ভুতভাবে এই তিন প্রদেশের ভাষা , সমাজ ও সংস্কৃতি ভিন্ন । পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী এলাকা অর্থাৎ সমতল জম্মুতে বসবাস করেন শিখ তথা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা । একদা তাঁরা ডোগরা রাজবংশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । রাজ্যের মধ্যস্থানে একদা গড়ে উঠেছিল মোগল সম্রাটের গ্রীষ্মাবাস । কারাকোরাম , জাঁসকর ও পীরপাঞ্জাল পর্বতে ঘেরা ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই অঞ্চলটিই রাজ্যের মুখ্য ভ্রমণকেন্দ্র । এখানে বসবাস করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা । উত্তর সীমান্তের লাডাকের উচ্চতা প্রায় ৭০০০ মিটার । এখানে বসতি স্থাপন করেছেন বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজন । তিব্বতীদের প্রভাব সুস্পষ্ট এদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে । অনেকে এইস্থানকে মিনি তিব্বতও বলে থাকেন । ভারত – চীন ( ১৯৬২ ) যুদ্ধে লাডাক দখল করেছিল শত্রুপক্ষ । এখন ভারতীয় সেনার বিশাল বাহিনী সর্বদা মোতায়েন রয়েছে লাডাক সীমান্তে।

জম্মু ও কাশ্মীর এর সাংস্কৃতি (Culture of Jammu and Kashmir) :

 কলহনের লেখা শ্লোক থেকে জানা যায় মৌর্যসম্রাট অশোকের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল কাশ্মীর । কুষাণ রাজ কণিষ্কও এখানকার রাজা ছিলেন । এই দুই রাজার রাজত্বকালেই বৌদ্ধধর্ম বিস্তার লাভ করেছে এখানে । জানা যায় বিশ্ববিখ্যাত তৃতীয় বৌদ্ধ কংগ্রেসও বসেছিল কাশ্মীরে । হিউয়েন সাঙ – এর বর্ণনা অনুযায়ী বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারক মধ্যাস্তিকার হাত ধরেই উপত্যকায় গৌতম বুদ্ধ প্রচারিত ধর্মের আগমণ । আজ কাশ্মীরের খ্যাতি জাফরান চাষের জন্য , এই সন্ন্যাসীর হাতেই তা শুরু । হিন্দু রাজাদের রাজত্বকালে ক্রমে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ক্ষীণ হয় । আনুমানিক সপ্তম শতাব্দীতে রাজ্যের প্রায় সমস্ত মানুষই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন । ধারণা , এসময়েই এখানে এসেছিলেন সনাতন ধর্ম প্রচারক গুরু শঙ্করাচার্য । হিন্দু রাজাদের হাত থেকে কাশ্মীরের ক্ষমতা চলে যায় তিব্বতের বৌদ্ধ রাজকুমারের হাতে । বৌদ্ধ রাজা রিনচিন ধর্মান্তরীত হয়ে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হন ১৩২০ – তে । তিনিই ভুস্বর্গের প্রথম মুসলিম সম্রাট । এই বংশেরই সম্রাট জাইনুল আবেদিনের ( ১৪২০-৭০ ) সময়ে রাজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থা , কৃষিতে আমূল পরিবর্তনকারী এই বাদশাহকে কাশ্মীরের বাসিন্দারা এখনও শ্রদ্ধা করেন । শিল্প – সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য । কাশ্মীরের বিখ্যাত হস্তশিল্পের জনক বলা হয়ে থাকে তাঁকেই । সুন্দর সূচিশিল্পের উপত্যকায় আগমন এ সময়েই পারস্য ও সমরখন্দ থেকে । জাইনুল আবেদিনের উদ্যোগেই বিদেশি শিল্পীরা এখানে থেকে কাজ করতেন ও স্থানীয়দের কাজ শেখাতেন । আইনের খসড়া তৈয়ারি করানো ছাড়াও পণ্ডিতদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন তিনি । হিন্দু পণ্ডিতদের উচ্চপদস্থ নানান প্রশাসনিক পদেও আসিন করেন । জাইনুল আবেদিনের রাজত্ব শেষ হতে না হতে ক্রমে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানোর তাগিদে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে উপত্যকার মানুষেরা । সফলও হন তারা । অবশ্য কিছুকাল মাত্র স্বাধীনতা ভোগ করার পর ( ১৫৮৬ ) তাঁদেরকে আসতেই হয় শক্তিমান মোগল বাদশাহ শাসনে । এরপরের ইতিহাস আমাদের অজানা নয় ।

 তবে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ইতিহাসের অন্য অধ্যায় শুরু হয় ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর । ১৯৪৭ সাল , অনেককাল আগে থেকেই ডোগরা রাজার রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর একরকম স্বাধীনই ছিল । সদ্য বিভক্ত হওয়া ভারত ও পাকিস্তান ভূখণ্ডের মাঝামাঝি স্থানে স্বাধীন রাজার রাজত্ব । চোখ পড়ল দু দেশেরই । পাকিস্তান প্রথমেই এ রাজ্যকে নিজের দখলে আনার চেষ্টায় ব্রতী হল । নতুন সৃষ্ট রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্তারা কাশ্মীর দখল করার জন্য সেনা মোতায়েন ও সন্ত্রাসমূলক কাজ চালিয়ে যেতে লাগল । ৬৮ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী রাজ্যের হিন্দু রাজা হরি সিং সাহায্য চাইলেন ভারতের কাছে । দিল্লির নির্দেশ মতো ১৯৪৭ – এর ২৬ অক্টোবর ভারত রাষ্ট্রে যোগও দিলেন মাত্র কয়েকদিন আগে পর্যন্ত স্বাধীন থাকা এই রাজ্য । সমতল ভারত থেকে কাশ্মীর যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল লাহোর হয়ে । পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সে পথ ব্যবহার করতে পারলো না ভারতীয় সেনা , বিমানে করে অবতরণ করল উত্তপ্ত কাশ্মীরে । যুদ্ধ লেগে গেল ভারত – পাকিস্তানের । রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে ১ লা জানুয়ারি , ১৯৪৯ – এ যুদ্ধবিরতি ঘটল । ততদিনে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানকে ঠেলে রাজ্যের প্রায় শেষ সীমানায় নিয়ে গিয়েছে । অধিকৃত অঞ্চল বরাবর নির্ধারিত হল কাশ্মীরের সীমান্ত । মাত্র কয়েক বছর আগের স্বাধীন রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হল , বুক চিরে হল আন্তর্জাতিক সীমানা । ভারতের কাছে রইল তিন ভাগের দুইভাগ আর পাকিস্তান রাখল তিনভাগের একভাগ । উপত্যকাবাসীর তুমুল বিদ্রোহ আন্দোলনও যে – কোনো এক দেশে আনতে পারল না সমগ্র রাজ্যকে । দুখণ্ডের একটি অংশেই রাজত্ব চালিয়ে যান রাজা । পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে কোনও রাজা ছিল না , তাই এই অংশকে তাঁরা আজাদ কাশ্মীর নামে আখ্যায়িত করেছিল । এমন নাম দেওয়ার পেছনে ছিল আরও এক উদ্দেশ্য , বোঝাতে চাওয়া হল ভারতের দিকের কাশ্মীর অধীন সেখানে কোনও স্বাধীনতা নেই , আর পাকিস্তানের অংশে সুখেই রয়েছে স্বাধীন মানুষেরা। 

 ১৯৫৭ তে স্বায়ত্ত শাসনের অবসান ঘটে ভারত রাষ্ট্রের অংশটি দেশের সংবিধানের প্রতি আস্থা দেখাল । ভারতের নতুন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল জম্মু ও কাশ্মীর । এই রাজ্যকে কেন্দ্র করেই ১৯৬৫ ও ১৯৭১ – এ আরও দুবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশি দুই রাষ্ট্র । রাজ্যের অভ্যন্তরেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠি । তাঁরা সদা – সর্বদা ব্যস্ত স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় । বর্তমানে ভারতের মাথার কোহিনুর , প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খনি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য অনেকটাই শান্ত ।

জম্মু ও কাশ্মীর এর জলবায়ু (Climate of Jammu and Kashmir) :

 ঋতুভেদে ভূস্বর্গের সৌন্দর্যও বদলায় । গ্রীষ্মে সমগ্র উপত্যকা গোলাপি ও সাদা রঙের ফুলে ভরে ওঠে । এ সময়ই ঘুরে দেখে নেওয়া যায় সমগ্র রাজ্যটিই । শীতকালে এখানে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য । তীব্র শীত সহ্য করে যদি একবার পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে তাহলেই দেখতে পাওয়া যায় বরফে ঢাকা সমগ্র উপত্যকা । সুবিশাল ডাল হ্রদের জল এ সময় বরফে পরিণত হয় । সহজেই এখান দিয়ে হেঁটে পারাপার করা যায় । এই সময়ে শ্রীনগর থেকে রাজ্যের সরকারি দপ্তর স্থানান্তরিত হয় জম্মু শহরে । 

জম্মু (Jammu) :

জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী জম্মু । চন্দ্রভাগা নদীর উপনদী তাওয়াইয়ের তীরে অবস্থিত এই শহরটি । গরমের সময় আবার রাজ্যপাট উঠে যায় শ্রীনগরে । কারণ জম্মুতে গরমের প্রকোপ প্রচণ্ড । __ দ্যা ট্রাভেল অনুন্ ভারতপরিক্রা গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে । রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি সমুদ্রতট থেকে ৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত । তবে বেশ কিছু জায়গায় সমতলভূমিও রয়েছে । জাম্বু রাজা প্রতিষ্ঠিত অতীতের জাম্বুনগরে বর্তমানে বসবাস করেন ডোগরা সম্প্রদায়ের মানুষ । বেশ কয়েক শতাব্দী ডোগরা রাজার রাজ্যও ছিল বর্তমান জম্মু । ডোগরাদের ভাষা ডোগরি , সংস্কৃত , ফারসি ও পাঞ্জাবি মিশ্রিত মধুর । ভ্রামণিকদের কাছে এ শহরের কদর না থাকলেও ব্যবসায়ীদের জন্য এটিই ভূস্বর্গ । তাওয়াই ও চন্দ্রভাগা নদীর তীরে অবস্থিত শহরটি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ৷ রাজ্যে ভ্রমণকালে জম্মু প্রবেশদ্বার ও জংশন রূপে কাজ করে । তা সত্ত্বেও জম্মু অবস্থানকালে ঘুরে দেখা যায় এখানকার বিখ্যাত কিছু স্থান ।

রঘুনাথজির মন্দির (Raghunath Ji Temple) – 

রাজা গুলাব সিং – এর সময় ১৮৩৫ – এ এই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয় , শেষ হয় ছেলে রণবীর সিং – এর সময় , ১৮৬০ – এ । সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি এই মন্দির দেখলেই তৃপ্তি পাওয়া যায় । শহরের মূল আকর্ষণ এই মন্দিরের দেওয়াল সোনা দিয়ে মোড়া , সঙ্গে রয়েছে মার্বেল ও রঙিন পাথরের কারুকার্য আর রকমারি দেওয়াল চিত্র । সুদর্শন মন্দিরে পুজিত হয় রাম , লক্ষ্মণ ও সীতা । এই চত্বরেই রয়েছে আরও নানান মন্দির । সূর্যাস্তের সময় মন্দির চত্বর অসাধারণ রূপ ধারণ করে । অদূরেই ১৮৮৮ – তে তৈরি আরও এক রঘুনাথজির মন্দির ও ১৮৮৩ – র হাজার শিবলিঙ্গের রণবীরেশ্বর মন্দির দেখে নেওয়া চলে একই সঙ্গে । জম্মু থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কোলকোন্ডালি মন্দির । ৪ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে পির খোহ । এখানকার দর্শনীয় বিষয় গুহার অভ্যন্তরে শিবলিঙ্গের অবস্থান । এছাড়াও দেখে নিতে পারেন লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির ।

বাহু দূর্গ (Bahu durga) – 

ডোগরা রাজা বাহুলোচনের হাতে তৈরি এই দুর্গটি আজ জম্মুর অন্যতম দর্শনীয় স্থান । শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে তাওয়াই নদীর বাম পাড়ে অবস্থিত ডোগরা রাজার তৈরি অজস্র মন্দিরে ভরা এই দুর্গটি পরবর্তীতে দখল করেন সূর্য বংশীয় রাজা জম্বুলোচন । অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আবার ডোগরা রাজারা দখল করে নেন এই দুর্গ । এ চত্বরে অজস্র বানরের বাসা আজ । প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাহু দুর্গের ঠিক প্রবেশদ্বারের কাছেই রয়েছে আকবরের তৈরি মসজিদ । দূর্গের অভ্যন্তরে রয়েছে বাওয়েওয়ালি মাতা বা মা কালীর মন্দির । এখানে রয়েছে মহামায়া মন্দির । সুন্দর বাগিচায় ঘেরা এই দুৰ্গে কিছুটা সময় কাটানো চলে । সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই দুর্গ দর্শন করা যায় । বিপরীতেই রয়েছে মহারাজা হরি সিং – এর তৈরি মুবারক মাণ্ডী প্রাসাদ । রাজস্থানি , ইউরোপীয় ও মোগল শৈলীর এই প্রাসাদ তৈরি হয় ১৮২৪ – এ । এখান থেকে প্রায় সমস্ত শহরটাকেই দেখতে পাওয়া যায় । সূর্যাস্তের সময় সমগ্র জম্মু শহরকে এখান থেকে দেখে নেওয়া যায় । 

রামনগর দূর্গ (Ramanagar durga) – 

রাজা কৃষ্ণদেবের তৈরি এই মন্দিরটি জম্মু শহরের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত । দূর্গের অভ্যন্তরস্ত মসজিদটি দেখে বোঝা যায় মুসলিম প্রজাদের প্রতি রাজার ভালোবাসা । এছাড়াও বিধ্বস্ত দূর্গের প্রতিটি দেওয়ালই ধারণ করে রেখেছে বাসোলী শৈলীর চিত্র । নানান আখ্যান ধরা রয়েছে এইসব চিত্রে । 

ডোগরা আর্ট মিউজিয়াম (Dogra Art Museum) – 

ঘুরতে ঘুরতে দেখে নেওয়া যায় ১৯৫৪ – য় নির্মিত বাসোলী ও ডোগরা শিল্পকর্মে সমৃদ্ধ সংগ্রহশালাটি । ৬০০ – র অধিক ছবি , ভাস্কর্য ও নানান হস্তশিল্পের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় এখানে । সোমবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য যে কোনো দিন গান্ধিভবনের ডোগরা আর্ট মিউজিয়ামে ভ্রমণ করা যায় । মাথায় রাখতে হবে গরমের দিনে সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ১.৩০ পর্যন্ত ও শীতে সকাল ১০.৩০-১৬,৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে এই সংগ্রহশালা । 

অমরমহল প্রাসাদ (Amarmahal Palace) – 

এখানে গিয়েও দেখে নেওয়া যায় বেশ কিছু দেশি – বিদেশি দুষ্প্রাপ্য জিনিসের সংগ্রহ । ১৯০৭ – এ ফরাসি স্থাপত্য শৈলীতে গড়ে ওঠা এই প্রাসাদে দেখা মেলে রাজ পরিবারের ব্যবহার করা আসবাবপত্র , বইপত্র , মিনিয়েচার ছবির সংগ্রহ । !সোমবার ছাড়া অন্য যে কোনো দিন সামান্য সময় খরচ করে দেখে নিন এই সংগ্রহশালা । সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা এবং দুপুর ২ টো থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে মিউজিয়াম । এছাড়াও জম্মু শহরে হরি সিং জেনানা পার্ক , রাজেন্দ্র পার্ক , পির খো , গুহামন্দির , রণবীর ক্যানেলের মতো আরও অনেক দেখার জায়গা রয়েছে । প্রয়োজন শুধু সময়ের ।

শ্রীনগর (Srinagar) :

সম্রাট অশোক মেয়ে চারুমতীকে নিয়ে ধর্মযাত্রায় বেরিয়েছিলেন । ৩ শতাব্দীর এই যাত্রায় বিভিন্নপ্রাস্ত ঘুরে যখন ডাল লেকের পাড়ে এসে মুগ্ধ হয়ে যান সম্রাট । মেয়ে চারুমতীর ইচ্ছায় বৌদ্ধ বিহার গড়ে তোলেন অশোক ডাল হ্রদের তীরে । এই বিহারকে কেন্দ্র করেই ক্রমে হরি সিং পর্বতের পাদদেশে জনসমাগম হতে থাকে । গড়ে ওঠে জনপদ । এই জনপদই রূপ নেয় শহরের । শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে নামকরণ করা হয় শ্রীনগর । অনেকের ধারণা এই জনপদের আদি নাম ছিল সূর্যনগর , তারই অপভ্রংশ নাকি শ্রীনগর । পর্যটক হিউয়েন সাঙ – এর বিবরণ থেকে জানা যায় , বর্তমান শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রবর সেন , খ্রিস্টাব্দ শুরুর শতকে । এ সময় শহরের নাম ছিল প্রবরপুরা ।

 এখন এই শহরটিই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী । অত্যধিক আধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা শ্রীনগরের জনসংখ্যা প্রায় আট লাখ । ৩৭.৮ বর্গ কিমি বিস্তৃত শহরটির প্রাণবায়ু ধারণ করে রেখেছে ডাল হ্রদ ও ঝিলম । সমুদ্রতট থেকে ১৫৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ঝিলমকে উত্তরে রেখে সম্প্রসারিত হচ্ছে শহর ।

 বেশিরভাগ ভ্রামণিকই জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণের সিডিউল করেন শ্রীনগরকে কেন্দ্র করে । আর সেটাই করা উচিত । কারণ এখানে থাকা , খাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবিধ সুযোগ রয়েছে । তবে রাজনৈতিক কারণে আজ সমগ্র শ্রীনগরই সেনাবাহিনীর হাতে । ফলে বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন চলাফেরায় নিষেধ আছে । কাশ্মীর ভ্রমণের স্মারক রূপে বিভিন্ন জিনিস ক্রয়ের সবথেকে ভালো সুযোগ শ্রীনগরেই । এখানেই বসেছে সরকার পরিচালিত ও বেসরকারি নানান বাজার । বাজার ঘুরে দেখে সস্তায় সংগ্রহ করা যায় শাল , কম্বল , আখরোট , জাফরানের মতো নানাবিধ দ্রব্য ।

 ভ্রামণিকদের সুবিধার জন্য গড়া সরকারি ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টারে গিয়ে পকেটের মাপ অনুযায়ী থাকা , খাওয়ার জায়গা ঠিক করে নেওয়া যায় । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি হোটেলে যোগাযোগ করায় অনেকটাই খরচা বাঁচে । থাকা , খাওয়া ছাড়া সরকারি , বেসরকারি বাস , ট্রেন , বিমান , গাড়ি বুকিং – এর সুবিধা রয়েছে এখানে । এখান থেকেই পাওয়া যায় সাইট সিয়িং – এর টিকিট । উচিত হবে প্রথম দিন গিয়েই পর পর সাত দিনের প্যাকেজ ট্যুরে টিকিট কেটে রাখা । তবে যেন শ্রীনগরে ৩৭ এজেন্টের সংখ্যা অত্যধিক । শ্রীনগর অবস্থানকালেই কাশ্মীরের বিশেষ বিশেষ কয়েকটি ভ্রমণকেন্দ্র দেখা হয়ে যায় । এখানে শঙ্করাচার্যের মন্দির আছে । কলহনের ‘ রাজতরঙ্গীনী ‘ – তে শঙ্করাচার্য মন্দিরের উল্লেখ আছে । এই শিবমন্দিরে তিনি দীর্ঘকাল তপস্যা করেছিলেন । ২০০ খ্রীষ্টপূর্বে সম্রাট অশোকের পুত্র নির্মাণ করেন এই মন্দির । 

ডাল লেক (Dal Lake) – 

শহরের কেন্দ্র থেকে আট কিমি ও ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার থেকে মাত্র হাফ কিমি দুরে শ্রীনগর তথা কাশ্মীরের চোখের মণি তথা প্রাচ্যের ভেনিস ডাল হ্রদ । প্রায় ৬ কিমি দৈর্ঘ্য ও ৩ কিমি প্রস্থ বিশিষ্ট ডালকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । গাগরিবাল , লাকুতি ডাল ও বড়া ডাল । এই লেকের মাঝেই ভেসে আছে শয়ে শয়ে হাউস বোট । থাকা – খাওয়ার বিবিধ ব্যবস্থা থাকে এখানে । হ্রদের মাঝে হাউস বোটে থাকার অভিজ্ঞতাই অনবদ্য । শিকারা চড়ে সারাদিন হাজারো দোকানদার তাদের পসরা সাজিয়ে আসে বোটে বোটে । সমগ্র কাশ্মীরে যা পাওয়া যায় এই লেকের জলে ভেসেও সে সকল জিনিস কেনা সম্ভব । এমনকি পোস্ট অফিসও আসে শিকারা করে ভেসে ভেসে । পাড় থেকে মানুষকে হাউস বোট পর্যন্ত পৌঁছানোর যানও শিকারা । লেকের পূর্বদিকে হরি সিং , দক্ষিণে শঙ্করাচার্য পর্বত আর পাড় ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্রীনগরের হাজারো হোটেল । ডালের পাড়ে বুলেভার্ড রোডে এসে দাঁড়ালেই অবাক হতে হয় রঙিন এই ভ্রমণকেন্দ্র দেখে । ডালের উত্তর পাড় বরাবর রয়েছে একাধিক মোগল বাগিচা , সেগুলিতে বসেও কিছু সময় ডালের শীতল হাওয়া খাওয়া যেতে পারে । পশ্চিম দিক আলোকিত করেছে হজরতবাল মসজিদ । লেকের জলেও ভেসে বেড়াচ্ছে নানান উদ্যান । তাতে চাষবাসও হয় । জনবসতিও গড়ে উঠেছে এই দ্বীপে । বর্ষার দিকে পদ্মের সঙ্গে ওয়াটার লিলি ফোটে এই হ্রদে । ফুলের মধ্যে দিয়ে পথ হয় শিকারা যাওয়ার । ফুল ঠেলে শিকারা করে জলবিহার করতে করতে নিজেকে সম্রাট শাহজাহানের মতো শৌখিন মানুষ বলে মনে হয় অনেক ভ্রামণিকের । আর যদি চাদনি রাত হয় , তাহলে কোনও কথাই নেই । ডালের জল থেকে চাঁদনি ছলকে ছলকে উঠে এক মায়াবি পরিবেশ তৈরি করে । হ্রদ থেকে এক কিমি দীর্ঘ খাল কেটে যোগাযোগ করা হয়েছে ঝিলমের সঙ্গে । এই খালপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ । 

চারচিনার (Charchinar) – 

হ্রদের মাঝামাঝি শাহজাদা মুরাদের হাতে রোপন করা চারটি চিনার গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে । লাগোয়া দ্বীপটির নাম হয়েছে চারচিনার দ্বীপ । শিকারা চড়ে চলা যায় এখানে । রেস্টুরেন্টও রয়েছে এই দ্বীপে । 

কবুতরখানা (Kabutarakhana) – 

অদূরে কবুতরখানা দ্বীপ । এখানেই রাজা রাজরাদের শখের পায়রা পোষা হত । এখনও সেখানে পায়রা বর্তমান আছে কিনা তা জানার কোনও উপায় নেই । কারণ , দ্বীপে ওঠার অনুমতি নেই , দূর থেকে দেখে নিতে হয় কবুতরখানা ।

নেহরু পার্ক (Nehru Park) – 

ডালের অংশ গাগরিবালে গড়ে তোলা হয়েছে নেহরু পার্ক । শঙ্করাচার্য পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই পার্কের পরিবেশ অতিব মনোলোভা । জওহরলাল নেহেরুর বন্দিবাসের স্মারক হিসেবে তৈরি এই পার্কে সন্ধ্যার পর আলোর রোশনাই হয় । ডাল লেক ভ্রমণে কিছুটা সময় অতিবাহিত করা যায় নেহরু পার্কে । 

জওহর বোটানিক্যাল গার্ডেন (Jawaharlal Nehru Botanical Garden) – 

শহর থেকে ৯ কিমি দূরে শাহজাহানের তৈরি এক রাজকীয় প্রস্রবণ ঘিরে জওহর বোটানিক্যাল গার্ডেন , শোনা যায় এই হল সর্বরোগহর । নেহেরুজি নিয়মিত এই জলপান করতেন । অনেকে বোতল ভরে এই জল নিয়ে যান ।  

হরি পর্বত (Hari parbata) – 

শ্রীনগর অবস্থানে আরও এক অবশ্য – দৃশ্য স্থান হল হরি পর্বত । শহর কেন্দ্র থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে অবস্থিত এই পর্বতের উচ্চতা খুব একটা বেশি নয় । পর্বত শিরে দেখে নেওয়া যায় ১৫৮৬ – তে আকবরের তৈরি দূর্গ । অনেকের ধারণা , প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ ১০ মিটার উঁচু প্রাচীরে ঘেরা এই দূর্গটি ১৮১২ – তে পাঠান শাসক আট্টা খান গড়েছেন । এ তথ্য ভুল । আট্টা খান এই দূর্গ সংস্কার করেছিলেন । তবে এখন এই দুর্গ বিধ্বস্ত । বিচিত্র দেওয়াল চিত্র ও ফারসি ভাষার নানান ক্যালিগ্রাফি আজ প্রায় ধ্বংস হওয়ার মুখে । তৈরির সময় দূর্গে একাধিক মন্দির ছিল , কিন্তু আজ আর তাদের হদিশ মেলে না । তাও সুন্দর হরি পর্বত । পাহাড়েই নানান ফুলের চাষ হয় । বিভিন্ন পুরাণে উল্লেখ মেলে এই পর্বতের । তবে এখন এই পাহাড়ে ঘেরা দূর্গ দেখার জন্য পর্যটন দপ্তরের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় । 

চশমাশাহী (Casamasahi) – 

ডাল লেকের পাড়ে শাহজাহানের নির্দেশে রাজকীয় প্রস্রবণকে ঘিরে আলি মর্দান খান তৈরি করেন সুন্দর , ছোট্ট স্থাপত্যের নিদর্শন চশমাশাহী । স্থানীয় ভাষায় চেশমাশাহী নামেই পরিচিত । স্থাপনকাল ১৬৩২ সাল । এখানকার জলে নানান দূরারোগ্য ব্যাধি সেরে যায় বলে স্থানীয় মানুষদের ধারণা । শোনা যায় , প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিয়মিত এই জলপান করতেন । পরবর্তীকালে এখানেই গড়ে উঠেছে জওহর বটানিক্যাল গার্ডেন , চিনার , ঝাউ গাছের নিবিড় ছায়ায় গড়ে ওঠা এই স্থানটির দৃশ্যগুণই আলাদা । তবে এখন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা যায় এখানে । অদূরেই দারার প্রমোদ ভবন পরি নিকেতনও দেখে নেওয়া যেতে পারে । লাগোয়া মনাস্ট্রিতে অতীতে সুফি কলেজ বসেছিল । আজ সেখানেই জ্যোতিষ স্কুল বসেছে । সুন্দর বাগিচা গড়ে উঠেছে পরি মহলকে কেন্দ্র করে । ডাল লেকও দেখতে পাওয়া যায় এই মহল থেকে । সামান্য নিচে পার্বতীর মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় সামান্য সময় খরচে । 

নিশাত বাগ (Nishat bug) – 

মোগল আমলের আরও এক কীর্তি নিশাত বাগ । প্রমোদ উদ্যান হিসেবে গড়া এই বাগিচায় এখনও দেখা মেলে সেকালের কারুকার্য মণ্ডিত বাড়িঘরের । ১৬৩২ – এ নুরজাহানের ভাই আসফ খান ১২ ধাপের এই বাগিচা প্রস্তুত করান । ঝরনা রয়েছে এই বাগিচায় । চিনার , সাইপ্রাস , চেরি , আপেল ও সিডারের বাগানও রয়েছে এখানে । শ্রীনগর শহর থেকে ১১ কিমি দুরে অবস্থিত ফুলে ফলে সমৃদ্ধ নিশাত বাগে ১৬৩৩ – এ শাহজাহানও এসেছিলেন হাওয়া খেতে । অদূরেই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঢু মারা যেতে পারে । 

হরওয়ান (Harwan) – 

সম্রাট অশোকের তত্ত্বাবধানে দি গ্রেট বুধিস্ট কাউন্সিল বসেছিল এখানেই । মহাদেব পর্বতে ঘেরা হরওয়ানের উল্লেখ মেলে পুরাণেও । সেখানে অবশ্য এইস্থানের নাম কুণ্ড লবণ । হরওয়ান জলাধারের জল পাইপের মাধ্যমে শ্রীনগর শহরে যায় । ট্রাউট মাছেরও চাষ হয় এই জলাশয়ে । চতুর্থ – পঞ্চম শতাব্দীতে গড়া বৌদ্ধ উপাসনালয়ের নিদর্শনও পাওয়া গেছে এখানে । 

শালিমার বাগ (Shalimar bug) – 

সম্রাট জাহাঙ্গির নূরজাহানের জন্য তৈরি করিয়েছিলেন শালিমার বাগ , ১৬১৯ – তে । শ্রীনগর শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই বাগিচাটি মোট ৪ টি ধাপে বিস্তৃত । চিনার গাছের সারির সঙ্গে বিভিন্ন ঋতুতে নানান রঙের ফুল ফুটতে দেখা যায় এখানে । চার ধাপের প্রথমটি জনসাধারণের জন্য নির্মিত । দ্বিতীয় ধাপটি প্যাভিলিয়ন ও রাজকীয় অ্যাপার্টমেন্টে সমৃদ্ধ । তৃতীয়টিতে পামপুরের কালো পাথরে তৈরি বরাদরি ও চতুর্থ ধাপে সম্রাটের নিজস্ব প্যাভিলিয়ন । গ্রীষ্মে এখানেই এসে বাদশাহরা আসতেন তাদের বেগমকে নিয়ে । সারিবদ্ধ ঝরনা শোভা বর্ধন করছে শালিমার বাগে । তবে রবিবার ছাড়া এসব ঝরনার সৌন্দর্য দেখা যায় না । মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে এখানে পৌঁছালে প্রতি সন্ধ্যাতেই দেখে নেওয়া যায় ভারচুয়াল মোগল দরবার । 

নাসিম বাগ (Nasim Bagh) – 

নাসিম কথার অর্থ সকালের হাওয়া । ডাল লেকের সামান্য দূরে অবস্থিত এই বাগিচায় সকালের দিকে মনোরম হাওয়া বয় । ১৫৮৮ – তে সম্রাট আকবর এই বাগিচা প্রস্তুত করান । চিনার গাছ ছাড়া অন্য কোনও গাছ নেই এখানে । অন্যান্য বাগিচার মতো ঝরনাও দেখতে পাওয়া যায় না এখানে । তবে এখান থেকে ডাল লেকের শোভা অপরূপ । আকবর নির্মিত এই বাগিচায় ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ বসেছে আজ । শিকারা নিয়ে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে পরতে পারেন মোগল বাগিচাগুলো দেখার জন্য । তবে খাবার ও জল সঙ্গে নেওয়া জরুরি । 

হজরতবাল মসজিদ (Hazratbal Mosque) – 

ডাল লেকের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত হজরতবাল মসজিদে সংরক্ষিত আছে হজরত মহম্মদের একখানি চুল । মোগল ও কাশ্মীরি শৈলীতে গড়া এই মসজিদটি তৈরি করিয়েছিলেন শাহজাহান । ১৯৬৩ – র ডিসেম্বরে মহম্মদের পবিত্র চুল চুরি যাওয়ায় অশাস্ত হয় সমগ্র উপত্যকা । কিন্তু পাঁচ সপ্তাহ পর যথাস্থানে ফিরে পাওয়াতে শান্তি ফিরে আসে কাশ্মীরে । ১৯৯৪ – এর গোড়ার দিকে জঙ্গীরা দখল নিয়েছিল এই মসজিদে । কিন্তু ভারতীয় সৈন্যদের তৎপরতায় জঙ্গীরা মসজিদ ছাড়তে বাধ্য হয় । অদূরে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়টিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । 

শ্রী প্রতাপ সিং মিউজিয়াম – 

জম্মু ও কাশ্মীরের নানান ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু নিয়ে গড়ে ওঠা মিউজিয়ামটি দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । ঝিলাম নদীর দক্ষিণে অবস্থিত সংগ্রহশালাটি থেকে জেনে নেওয়া যায় উপত্যকার অনেক অজানা ইতিহাস । সোমবার ছাড়া অন্যান্য দিন সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকেল ৪.০০ টের মধ্যে ঘুরে নেওয়া যায় এই মিউজিয়ামে । 

জুম্মা মসজিদ – 

অদ্ভুত এই মসজিদটি তৈরি করেন সুলতান সিকান্দার । ইন্দো – সেরাসেনিক শৈলীতে তৈরি এই মসজিদের থামের কাজ করছে প্রায় ৩০০ টি শাল ও ৩৭৮ টি দেবদারু গাছ । দৈর্ঘ্য প্রস্থে ১৭ মিটারের ছাদ ও চারটি ও তিনটি মিনার ধারণ করে আছে এই শাল গাছগুলি । ১৩৮৫ – তে তৈরি জুম্মা মসজিদ বর্তমানে কাশ্মীরের সবথেকে বড়ো মুসলিম উপাসনালয় । প্রায় ১০০০০ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন এখানে । সিকান্দারের পুত্র জাইনুল আবেদিনের হাতে সংস্কার হওয়ার পর তিনবার আগুনে পোড়ে এই মসজিদ । কিন্তু বারবারই সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে । শেষবার , ১৬৭৪ – এ আগুনে ভষ্মীভূত হওয়ার পর সংস্কার হয় রাজা প্রতাপ সিং – এর আমলে । 

বাদশাহ –

ফারসি স্থাপত্যের নিদর্শন পাঁচ ডোমের সমাধি সৌধ বাদশাহ দেখে নেওয়া যায় শ্রীনগরে থাকাকালীন । কাশ্মীরের জনপ্রিয় রাজা জাইনুল আবেদিনের মাতা , মির্জা হায়দর ও খোদ জাইনুল শায়িত আছেন এখানে । তবে সংস্কারের অভাবে আজ প্রায় ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে বাদশাহ । 

শঙ্করাচার্য পাহাড় – 

গোবিন্দ পদাচার্যের কাছে দীক্ষা নিয়ে ভারত ভ্রমণে বের হন শঙ্করাচার্য । নানান স্থান ভ্রমণ করার পর আসেন এই পাহাড়ে । তপস্যায় বসেন এখানে । তখন এই পাহাড়ের নাম তখত – ই – সুলেমান , অর্থাৎ সলোমন বা সুলেমানের সিংহাসন । শঙ্করাচার্য ভ্রমণের পর পাহাড়ের নাম বদলায় । বাদশাহ জাহাঙ্গিরের আমলে এই পাহাড়ে মন্দির গড়া হয় শঙ্করাচার্যের । সনাতন ধর্মী মানুষের কাছে এই মন্দির খুবই পবিত্র । পাহাড় থেকে কাশ্মীর উপত্যকা , ঝিলম নদী , পীরপাঞ্জাল শৃঙ্গ দেখে নেওয়া যায় । শানি এছাড়াও শ্রীনগরে থাকাকালীন ঘুরে দেখা যায় গাগরিবাল পার্ক , শাহ হামদান মসজিদ , পাথর মসজিদের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলি । 

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) হ্রদ , জল প্রবাহ , হিমবাহ , উপত্যকা :

মানসর (Mansar) – 

জম্মু থেকে গাড়ি চড়েই ঘুরে নেওয়া যায় সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের নিদর্শন মানস সরোবর বা মানসর হ্রদে । চারদিক দিয়ে পাহাড় ও পাইন গাছে ঘেরা এই হ্রদের কাছে গেলেই শাস্তি পাওয়া যায় । পান্না সবুজ রঙের জলের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় অনেকটাই সময় । বোটিং – এর ব্যবস্থাও রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তৃত এই হ্রদে । চত্বরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শেষনাগ , মানসরেশ্বর শিব , নৃসিংহদেব , দুর্গা মন্দির । অদূরেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক । হরিণদের সঙ্গেও সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে নেওয়া যায় । এখান থেকে ফেরার পথে দেখে নেওয়া যায় সুরিনসর বা সনাসর হ্রদ । মনোরম পরিবেশে অবস্থিত হ্রদের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপও রয়েছে । 

লোলাব ভ্যালি (Lolab Valley) – 

‘ল্যান্ড অফ লাভ এন্ড বিউটি এর প্রতিশব্দের আদ্যাক্ষর নিয়েই লোলাব । শ্রীনগর থেকে ১১৪ কিমি দূরে । কুয়াওয়ারা থেকেই আলাদা হয়েছে রাস্তা । চলে গেছে ওয়াদি এ লোলাব তোরণ পেরিয়ে । ৫,৫০০ ফুট উচ্চতায় এই উপত্যকাটি দৈর্ঘ্যে ২৫ কিমি . এবং প্রস্থে ৫ কিমি । শোনা যায় কাশ্যপ মুনির সাধনা স্থল ছিল লোলাব উপত্যকা । এই কাশ্যপ থেকে কাশ্মীর । প্রধান জনভাষা হল সোগাম । আবার ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউসটির অবস্থান চন্ডীগ্রামে । অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে এই রেস্টহাউস । আবার ধান – ভুট্টা – আখরোটের – কৃষিক্ষেতে চলেযান— সাথে সাথে দেখুন উপত্যকার বুক চিরে চলে গেছে নদী দুটি লালকুল বা লাহওয়াল ও ডালকুল । 

শ্রীনগর (Srinagar) –

 থেকে দূরত্ব ১৩৫ কিমি । নীলরঙা কিষেনগঙ্গা নদীর তীরেই দাওয়ার । উন্নত শিক্ষিত জীবনযাত্রার সবই রয়েছে এই জনপদে । পাকিস্থান অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আসা বুরহিল নদী দাওয়ার – এর কাছেই শীতলবাগে এসে মিশেছে কাওয়াল নদীর সাথে । এই ভাবে জন্ম নিল কিযেনগঙ্গা নদী । চারিপাশে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি , মাঝে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্থানের সেনা ছাউনিসহ অনেক কিছুই দেখা যায় । সীমান্তবর্তী জায়গা বলে গুরেজ এ আসতে হলে কাজিপারা ডি.সি.অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে আসা দরকার । ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি রাখুন অনুমতি প্রাপ্তির জন্য । সন্ধ্যায় হরা খাতুন ড্রামাটিক ক্লাবে সময় কাটাতে পারেন ।

বানগাস (Bangas) –

বানগাস মানে ঘাসের বন । আর হয়তো তাই , ট্রান্স হিমালয়ান রেঞ্জে ১০০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই উপত্যকায় হাঁটতে গেলে পা ডুবে যাবে নরম ঘাসের কার্পেটে । ৩০০ বর্গকিমি আয়তন এই উপত্যকার রূপ খানিকটা কাঠির মতো । নানা দুষ্প্রাপ্য ঔষধি গাছও পাবেন । জেনে রাখা ভালো সীমান্তবর্তী এলাকা হবার জন্য এখানে আসতে হলে হান্দওয়ারা এস – পি – অফিস থেকে অনুমতি পত্র করবেন , ভোটার কার্ড ও ছবি সহ । 

কর্ণ (Karna) –

 কুপওয়ারা জেলায় অবস্থিত কর্ণ । উপত্যকার অর্থ হল টাংধার । আধুনিক শিক্ষিত জীবনযাত্রার সবকিছু এখানে আছে । শীতে বরফের জন্য ৫ মাস পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে । চলে যান স্থানীয় কিষেণগঙ্গা নদীতে । উপভোগ করুন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । এই নদীর ওপর একটি সেতু রয়েছে , জিরো ব্রিজ , ক্রেশিং ব্রিজও বলে কেউ কেউ , মাসে দুবার সরকারের অনুমতিতে দুদেশের আত্মীয় – বন্ধুত্ব একত্র হয় কুশল বিনিময়ের জন্য । 

আলপাথার লেক (Alpather Frozen Lake) – 

সমুদ্রতট থেকে ৩৮৪৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত আলপাথার লেকের জল দেখে তৃপ্ত হয় মন । তিনকোনা লেকের পাশে সদাসর্বদাই রয়েছে প্রকৃতি দত্ত সৌন্দর্য । সবজে রঙের জলে ভেসে বেড়ায় সাদা বরফ । অদূরেই আফারওয়াট পাহাড় , বলাবাহুল্য এই পাহাড়ের পাদদেশেই এই প্রাকৃতিক হ্রদ । 

নিঙ্গেল নামা , ফিরোজপুর নালা , কান্টারনাগ হ্রদ (Ningel Nama, Firozpur Nala, Kantarnag Lake) – 

আফারওয়াট ও আলপাথার পাহাড়ের বরফ গলা জল প্রবাহ নিঙ্গেলনামা দেখে নেওয়া যায় গুলমার্গ অবস্থানকালে । এই প্রবাহই অদূরে মিলিত হয়েছে ঝিলম নদীর সঙ্গে । সামান্য এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় সবুজের সমারোহ লিয়েন মার্গে । লিয়েন নালা থেকে আরও কিছুটা এগোলে দেখতে পাওয়া যায় ফিরোজপুর নালা । ট্রাউট মাছের চাষও হচ্ছে এই পাহাড়ি নদীতে । মনোরম পরিবেশের মধ্যে দিয়েই পৌঁছে যাওয়া যায় কান্টারনাগ নামক প্রাকৃতিক হ্রদে । এখানকার পরিবেশও মন মাতানো । অদুরেই হাতছানি দেয় তোষ ময়দান ।

কোলাহাই হিমবাহ (Kolahai Glacier) – 

এই হিমবাহ দেখার জন্য ভ্রামণিকদের করতে হয় খুবই কষ্ট । কথায় আছে কষ্ট করলেই কেষ্ট মেলে । ৩৩৫২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হিমবাহের সামনা সামনি পৌঁছাতে পারলেই সমস্ত কষ্ট দূর হয় । দুই পাহাড়ের মাঝ থেকে নেমে আসা চওড়া কোলাহাই হিমবাহের থেকে বেগুনি রঙের আভা বার হয় । এখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন পোরখাওয়া ভ্রামণিকরা । হিমবাহের গলা জলেই পুষ্ট কাশ্মীরের লিডার নদী । সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নানান মহিমা বিচ্ছুরণ করে কোলাহাই ।

মহিমান্বিত হতে অন্তত একটা রাত্রি থাকা প্রয়োজন এখানে । উৎসাহীরা আরও ১৬.৪ কিমি হেঁটে যেতে পারেন তারসর লেকের শোভা দেখতে । কোলাহাই থেকে সাত কিমি দূরের শিকারগড় রিজার্ভ ফরেস্টটিও দেখে নেওয়া যায় এই সুযোগে ।

উলার , মানসবল লেক (Ular, Manasbal Lake) – 

কাশ্মীরের সৌন্দর্য দেখার জন্য কিছুক্ষণের জন্য অন্তত উলার লেকে ঘুরে আসা দরকার । প্রকৃতির তৈরি এই হ্রদের চারপাশে হিমালয় পর্বতমালার নানান গিরি শিখর । লেকের জলে পদ্ম ফুলের সমারোহ । লেকের পাড় ধরে গড়ে উঠেছে বসতি । বোটিং – এর সুবিধাও আছে এখানে । তবে প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই এখানকার আবহাওয়া খারাপ হয় । ঝড় ও বৃষ্টি প্রায়শই লেগে থাকে । তাই ৩০ ফুট গভীর এই লেকে বিকেলের দিকে বোটিং করা উচিত হবে না । সমুদ্রতট থকে ১৫৮০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত উলার ( দৈর্ঘ্যে ১৯ ও প্রস্থে ১০ কিমি ) ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ । অদূরেই বাঁকি পুর নালা । ঝিলাম নদী এখানেই মিশেছে উলারে । সেখানেই প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হয়ে মনোরম একটি দ্বীপ । দক্ষিণে সোপুরের কাছে ঝিলম আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । কাশ্মীর সম্রাট জাইনুল আবেদিন ১৪৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদ গড়েছিলেন উলারের পাড়ে । কিন্তু তা আজ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে । এখান থেকে পাঁচ কিমি যেতে পারলেই নিঙ্গেল নালা । হ্রদের পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাবা শুকরদিন পাহাড়ের চূড়ো থেকে এই জলাশয় দেখতে মন্দ লাগে না ।

 উলার দেখতে আসার সময় পথেই পড়ে পাট্টান ৷ সামান্য সময় খরচ করে দেখে নেওয়া যায় নবম শতাব্দীর রাজা শঙ্কর বর্মার রাজধানীটি । তারই গড়া দুটি মন্দির রাজধানীর নিদর্শন বহন করছে এখনও । উলার দেখে চলা যেতে পারে মানসবল লেক দেখতে । মানসবল লেকের উচ্চতা ১৫৬০ মিটার । আকারে খুব একটা বড়ো না হলেও ঝিলম উপত্যকার এই হ্রদের নীল রঙের জল পাগল করে ভ্রামণিকদের । টলটলে জলের এই হ্রদ খুবই প্রিয় ছিল শাহজাহানের মেয়ে রোশেনারার । তাঁরই তৈরি দারগোবাগের ধ্বংসস্তূপ আজও সে বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে । শীতে পরিযায়ী পাখিরা দূর দেশ থেকে আসে মানসবল লেকে । এ সময় এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পাখি দেখিয়েরাও ভিড় জমান । 

প্যাংগং লেক (Pangong Lake) – 

এশিয়ার বৃহত্তম নোনা জলের প্যাংগং লেক , বা প্যাংগং সো । এখানে উচ্চতার সাথে শরীরকে মানাতে হবে । থ্রি ইডিয়ট সিনেমার ক্লাইমেক্স শুটিং হয়েছিল এখানে । ৪৪০০ মিটার উঠে শ্বাসকষ্টে পড়েন অনেকে । এই লেকের জল এতটাই নীল মনে হবে রূপকথা । সকালের দিকে না গিয়ে বিকেলে যাওয়া দরকার এই ১৩৫ কিমি দীর্ঘ লেকটি দেখতে । কারণ সূর্যের আলো কমে যাওয়ার সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে পরিবেশের রং বদলায় । ৪২৬৭ মিটার উচ্চে অবস্থিত লেকটির সামান্য কিছুটা অংশ ভারতে বাকি অংশ চীন অধিকৃত তিব্বতে । ৪০ ফুট গভীর এই লেকের স্বচ্ছ জল ভেদ করে তলায় পড়ে থাকা রঙিন পাথর দেখতে মন্দ লাগে না । হাস , সিগালও রয়েছে লেকের জলে । টুক করে প্যাংগং দেখে ফিরে গেলে ভ্রামণিক মন শান্তি পায় না । এখানকার পরিবেশ দাবি করে অন্তত একটা দিন থেকে সৌন্দর্য দেখার । লেক দেখতে যাওয়ার সময় চাংপাদের গ্রাম তাংসেও দেখে চলা যেতে পারে ।

সামোরিরি লেক (Somoriri Lake) – 

প্রায় ৫০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত প্রকৃত ভূস্বর্গ লাডাকের সামোরিরি লেক । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে এই লেকের রূপ দেখার মতো । হ্রদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বসতি । যাতায়াত সহ সামোরিরি দেখার জন্য সময় লাগে প্রায় পাঁচ দিন । ট্রেক ছাড়া আর কোনও গতি নেই সামোরিরি ভ্রমণে । সামোরিরির গুম্ফাটিতেও ঢু মারা যায় । যাত্রাকালে পথে বাস থামে কোরজোেক গ্রামে । এখানকার গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য । এপথে চলার জন্য অনুমতি প্রয়োজন লের ডেপুটি কমিশনারের কাছ থেকে ।

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) ঐতিহাসিক স্থান :

আখনুর ফোর্ট (Akhnoor Fort) – 

রাজা গুলাব সিং ও রণজিৎ সিং – এর স্মৃতিবিজড়িত আখনুর ফোর্ট আজ জনসাধারণের জন্য অবশ্য দৃশ্য । রণজিৎ সিং এখানে অবস্থানকালেই রাজা খেতাবে আখ্যায়িত করেছিলেন গুলাব সিংকে । দুর্গতে এখন স্কুল ও সরকারি দপ্তর বসেছে । আখনুর ফোর্ট থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে এগোতে থাকলে নৌসেরা , পুঞ্চ ও ঝানগড় । ১৯৪৭ – এর বেদনা এখনও যেন ভারী করে রেখেছে এখানকার বাতাসকে । পাক মদতপৃষ্ঠ জঙ্গিদের বারমুলা , কোট , নৌসেরা থেকে তাড়িয়ে ভারতের বীর সৈনিক ব্রিগেডিয়ার ওসমান ১৯৪৭ – এর ৪ নভেম্বর ঝানগড়ে শহিদ হন । 

বারমুলা (Barmula) – 

১৯৪৭ – এর পাক হানাদার ও ভারতীয় জওয়ানদের মধ্যে যুদ্ধের স্মৃতি এখনও বহন করে চলেছে বারমুলা । এলাকার তৎকালীন বিখ্যাত নেতা মগবুল শেরোয়ানিকে হত্যা করে পাক দুষ্কৃতিরা । শহরের কনভেন্ট হাসপাতালটিও রক্ষা পায়নি ঘৃণ্য এই আক্রমণ থেকে । এইস্থানে যুদ্ধ চলাকালীন ভারতীয় বীর ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রণজিৎ রায় । 

ক্রিমচি (Krimi) – 

অনুচ্চ পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এইস্থানের ইতিহাস গুপ্তযুগের । এ সময়ে এখানে স্থাপিত হয়েছিল বর্ধিষ্ণু নগরী । যদিও কয়েকটি মন্দির ব্যতীত সে ইতিহাস ব্যক্ত করার মতো আর কিছুরই সন্ধান করা যায়নি । মন্দিরগুলিকে দেখে খাজুরাহোর মন্দিরের কথা মনে পড়ে যায় ।

বানিহাল (Banihal) – 

প্রকৃতির মায়া জড়ানো আরও এক লোকালয় বানিহাল । অতীতে কাশ্মীর উপত্যকার প্রবেশদ্বার ছিল এই বানিহাল । তৎকালীন কালা কানুনের বিরোধীতা করে এখানেই বন্দি হয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু ও ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । নেহরু ছাড়া পেয়ে গেলেও বন্দি অবস্থাতেই শ্রীনগরের হরি পর্বতে ১৯৫৩ – তে মৃত্যু হয় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের । এরকম অনেক ইতিহাসেরই সাক্ষী বানিহাল । স্বাধীনতার আগে শ্রীনগর যাওয়ার প্রধান সড়কটি ছিল লাহোর হয়ে । দ্বিতীয় পথটি ছিল পীরপাঞ্জাল পাহাড়ের গা বেয়ে । প্রায় ৩৩০০ মিটার উঁচু এইপথে সব সময়ই বরফ থাকত । দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে সড়ক পথে শ্রীনগরের যোগাযোগ উন্নত করার উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে তৈরি হয় টানেল । প্রথমে একমুখী থাকলেও প্রয়োজনীয়তা বোধ করে দ্বিমুখী করা হয় টানেলকে । প্রায় ২৬০০ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের বুক কেটে তৈরি টানেলের নাম দেওয়া হয় জওহর টানেল । ১৯৫৬ – র ২২ ডিসেম্বর টানেলটির উদ্বোধন করেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন । তবে টানেলে ঢোকার নানান বিধিনিষেধ রয়েছে । ফলে বাসে চলাকালীনই দেখে নিতে হয় দু- কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলটিকে । যে সকল বাস সকাল ৯ টার পর জম্মু ছাড়ে তারা রাতে বানিহালেই থেকে যায় । ক্ষণিক সময় ব্যয় করে টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট থেকে সমগ্র উপত্যকার সৌন্দর্য গ্রাস করা যায়।

ভেরিনাগ (Verinag) – 

সম্রাট জাহাঙ্গির ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে খনন করান ভেরিনাগ নামের ১৫ মিটার গভীর কুন্ডটি । ১৬১২ – তে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির এই কুন্ডটি নির্মাণ করেন । প্রচুর ট্রাউট মাছের বাস স্বচ্ছ এই জলে । সুদর্শন ঝরনাও রয়েছে এই কুন্ডর ওপর নির্ভর করে । গ্রীষ্মের দিনে যেমন ভেরিনাগের জল শুকোয় না বর্ষায় তেমন উপচেও পড়ে না । ভেরিনাগ পাহাড়ে ১৮৭৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই কুণ্ডের জলেই পুষ্ট ঝিলম নদী । জাহাঙ্গিরের অতি প্রিয় ভেরিনাগ থেকে ফেরার পথেই তার মৃত্যু ঘটে । জলাশয়ের চারপাশের সবুজকে বাগিচার রূপ দেন সম্রাট শাহজাহান , ১৬২০ – তে । পাহাড়ের কোলে তৈরি এই বাগিচাটিই কাশ্মীরে তৈরি মোগল গার্ডেনের মধ্যে প্রাচীন । জম্মু থেকে দেরিতে ছাড়া বাস বানিহালে রাত্রিযাপন করে পরদিন সকালে ভেরিনাগ দেখিয়ে যাত্রি নিয়ে শ্রীনগরের দিকে যায় । 

বাবারেষির (Babareshir) –

 সুলতান জাইনুল আবেদিনের স্মৃতিবিজড়িত এইস্থান । তার সভাসদ ফকির বাবা পামদিনের সমাধি রয়েছে এখানে । পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই সমাধিক্ষেত্রকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্টই ভক্তি রয়েছে । সমাধিক্ষেত্রের কারুকার্যও দেখার মতো।

অবন্তীপুর (Avantipur) – 

নবম শতাব্দীতে গড়া দুটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অবন্তীপুরা শহর । উৎকল বংশের প্রথম রাজা অবন্তী বর্মার হাতে তৈরি মন্দির দুটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে । আবার অনেকে ধারণা করেন মন্দির দুটি পাণ্ডবরা বানিয়েছিলেন । শ্রীনগরের প্রতাপ সিং মিউজিয়ামে এই মন্দিরের কিছু নিদর্শন এখনও দেখতে পাওয়া যায় । ৮৫৫-৮৮৩ সাল পর্যন্ত অবস্তীপুর ছিল কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী । কিন্তু পরবর্তীকালে রাজা প্রবর সেন এখান থেকে শ্রীনগরে স্থানান্তরিত করেন রাজধানী । 

আচ্ছাবল (Accha bala) – 

মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গিরের তৈরি উদ্যান আচ্ছাবল দেখে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের চোখে সুখের অশ্রু আসে । অনেকে ধারণা করেন ১৬২০ – তে শাহজাহানের কন্যা জাহানারা এই বাগিচাটি প্রস্তুত করান । উচ্চতা ১৬৭৭ মিটার । একাংশের মত খ্রিস্টের জন্মের প্রায় পাঁচশত বছর আগে রাজা অক্ষবল এই বিশালাকার উদ্যানটি তৈরি করিয়েছিলেন । তবে ইতিহাস বলছে , তিনটি ধাপে তৈরি এই বাগান বড়ো প্রিয় ছিল মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের মহিষী নূরজাহানের । সংলগ্ন ট্রাউট হ্যাচারিটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । 

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) অন্যান্য দর্শনীয় স্থান বা ভ্রমণ স্থান :

বাসোলী (Basuli) – 

জম্মুতে অবস্থানকালে ঘুরে নেওয়া যায় বাসোলী শিল্পের পীঠস্থানে । মোগল ও কাশ্মীরের নিজস্ব পাহাড়ি শিল্পধারার সমন্বয়ে তৈরি বাসোলী চিত্রশিল্প জগৎ বিখ্যাত । শহরে ঘুরে ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন শিল্পীর হাতের ছোঁয়া লাগা বাসোলী চিত্র । এছাড়াও এ শহরে বেশ কিছু মন্দির সহ আরও অনেক দেখার মতো জায়গা রয়েছে । পায়ে পায়ে দেখে নেওয়া যায় সেগুলিও । 

বৈষ্ণোদেবী কাটরা (Vaishnodevi Katra) – 

ভারতভূমির অন্যতম হিন্দু তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী অবস্থিত জন্ম থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে । ২১১২ মিটার ( ৬৫০০ ফুট ) উচ্চে গুহা অভ্যন্তরে অবস্থিত মন্দিরটি প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন । জনশ্রুতি হংসালি গ্রামের নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ শ্রীধরজিকে দর্শন দেন বৈষ্ণোদেবী । তিনিই স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দেবীর বসন আবিষ্কার করেন এই গুহায় । পুরাণ অনুসারে পরমা শক্তিশালী এই দেবীর চোখের মণি চন্দ্র ও সূর্য । বসনে তারকাখচিত ব্রহ্মাণ্ড । বসন প্রাস্তে থাকে পৃথিবী । অসুর বধের পর দেবী এখানেই আবাস গড়েন । গুহা অভ্যন্তরে বৈষ্ণোদেবী রূপোর মুকুট ও ছাতার দ্বারা সজ্জিত । ওহার তিন দেওয়ালে রয়েছে দেবীর আরও তিন রূপ , মহাকালী , মহাসরস্বতী ও মহালক্ষ্মী । ৩৯.৬ মিটার দীর্ঘ ও ১.৮২ মিটার প্রশস্ত গুহা অভ্যন্তরীণ মন্দির সংস্কার হয়েছে ১৯৭৬ সালে । অতিব সাবধানে দশ থেকে বারো জন একসঙ্গে দর্শন করতে পারেন দেবীর প্রতিমা । গুহায় পায়ের পাতা ডুবে যায় শীতল জলে । অবশ্য এখন গুহার বাইরে থেকে বাইপাস করা হয়েছে সহজে প্রতিমা দর্শনের জন্য । পুজোর কোনও প্রথা নেই এখানে । নবরাত্রির পর টানা আড়াই মাস চলে এখানে ভক্তদের আগমন । কাটরা ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার থেকে চিরকুট নিয়ে তবেই মন্দিরে ঢোকা যায় ।

  নতুন আরেকটি মন্দির গড়ে উঠেছে ১৪৬০ মিটার উচ্চতায় । অনেকের ধারণা , মহিষাসুর বধের এই গুহাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন দেবী । আধকাবরী মন্দিরে নানা কৃত্রিম জিনিস দেখতে পাওয়া যায় । ফলে অনেক ভক্তই বিশ্বাস করেন না দেবীর প্রকৃত আশ্রয়স্থান হিসেবে । বৈষ্ণোদেবীর গুহায় পৌঁছানোর আড়াই কিলোমিটার আগে অবস্থিত ভৈরবনাথ মন্দিরটিও দেখে নেওয়া যায় এ সুযোগে বৈষ্ণোদেবীর মন্দির দর্শন হেতু কাটরা অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় হনুমানজি মন্দির , রঘুনাথ মন্দির , হরে রাম হরে কৃষ্ণ মন্দির , ভূমিকা মন্দির , বাবা জিট্টো মন্দির , দেবা মাঈ মন্দির।

রিয়াসী (Reasi) – 

সরল হাইডেল প্রোজেক্ট দেখতে রিয়াসী যাওয়া যেতে পারেন কাটরা অবস্থানের সময় । প্রোজেক্ট ছাড়াও এখানে দেখার মতো আরও অনেক কিছুই রয়েছে । জেনারেল জারোয়ার সিং – এর বিধ্বস্ত দূর্গ ও অঘোর জিট্টোতে কিছুটা করে সময় দেওয়া যায়। 

উধমপুর (Udhampur) – 

বৈষ্ণোদেবীর মন্দির দর্শন করে তড়িঘড়ি শ্রীনগরে না গিয়ে কিছুটা সময় খরচ করে উধমপুর ঘুরে নেওয়া যেতে পারে । অত্যন্ত সাজানো – গোছানো ক্যান্টনমেন্ট শহর উধমপুরের নীরবতা মনলোভা । এখানে শান্তিতে কিছুটা সময় কাটানো যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে ।

কুদ (Kuda) –

১৭৩৮ মিটার উচ্চতায় মনোরম পরিবেশে অবস্থিত কুদে শান্তিতে দিন যাপন করা চলে । এইস্থান চড়ুইভাতির জন্য খুবই বিখ্যাত । অদূরে পাহাড়ি ঝরনাটি দেখে নেওয়া যায় সামান্য সময় খরচে । কুদের আরও একটি বিখ্যাত হল মিষ্টি । এখানে গরম সৌনপাপড়ির , স্বাদ নিতে ভুলবেন না । বিভিন্ন ধরনের প্রেমদি হাট্টির দোকান ।

পাটনীটপ (Patnitop) – 

পাইন ও দেওদার গাছের ছাওয়ায় ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ পাটনীটপ । চারদিক থেকে পাহাড় 201 ঘিরে রেখেছে ২০২৪ মিটার উঁচু পাহাড়ি মনোরম স্থানটিকে । আপেল বাগানও রয়েছে এখানে । শীতের দিকে বরফেরও দেখা পাওয়া যায় । নিরালায় কয়েক দিন কাটানোর জন্য এই শৈলাবাস খুবই বিখ্যাত ৷

সুদ মহাদেব (Sud Mahadev) – 

পাটনীটপের অদূরে ১২২৫ মিটার উচ্চতায় সুদ মহাদেবের অবস্থান । এখানে একটি ত্রিশূল ও দণ্ডকে পুজো করা হয় । শক্তিমান ভীমের দণ্ড হিসেবে খ্যাতি আছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে । এখানে জমকালো মেলা ও অনুষ্ঠান হয় শ্রাবণী পূর্ণিমায় । সামান্য এগোতেই দেখে নেওয়া যায় তলাই । এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রত্নতত্ত্বের নানান নিদর্শন ।

সানাসার (Sanasara) – 

সমুদ্রতট থেকে প্রায় ২৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মনোরম সানাসার । চারপাশে বরফে ঢাকা পাহাড়ের মাঝে পেয়ালার মতো পড়ে থাকা বৃত্তাকার স্থানটির আবহাওয়া খুব স্বাস্থ্যকর । উপত্যকায় চড়ে বেড়ায় গৃহপালিত পশুরা । ফার ও পাইনে ঢাকা নৈসর্গিক শোভার অধিকারী সানাসারে চাষবাসও হচ্ছে । তবে এখানকার সৌন্দর্য দেখার লোক খুব একটা বেশি নেই । কারণ এই স্থানটি ভ্রামণিকদের মধ্যে ততটা খ্যাত নয় । ছোট্ট করে বলে রাখা যায় , এটি সৌন্দর্যের দিক থেকে গুলমার্গকেও টেক্কা দিতে পারে । 

বাটোর্ট ও ভাদরওয়া (Butort and Bhadarwa) – 

কাশ্মীরে অরণ্য দেখার স্বাদ মেটায় বাটোট । নিবিড় অরণ্যের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে দেখে নেওয়া যায় নানাধর্মী পাখির সমারোহ । পাখির গান শুনতে শুনতেই পৌঁছে যাওয়া যায় ভাদরওয়া । অপরূপ সুন্দর এইস্থানে প্রাচীন মন্দিরও আছে । এখান থেকেই অমরনাথের ছড়ি যাত্রা শুরু হয় । সমগ্র রাজ্যের তুলনায় ছোটা কাশ্মীর বলে খ্যাত এইস্থানের বাসিন্দাদের মধ্যে শিক্ষিতের হার অনেক বেশি ।

বাসুকি কুণ্ড বা কৈলাস লেক (Basuki Kund or Kailash Lake) – 

হিন্দুদের আরও এক তীর্থস্থান এটি । সমুদ্রতট থেকে ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় টলটলে জলের হ্রদটি দেখলেই পুণ্য হয় । রাখি পূর্ণিমার পরের অমাবস্যায় এই কুণ্ডে তিন ডুব দিয়ে দেবাচনা করলে পাপখণ্ডিত হয় । জনশ্রুতি এই রাতে কুণ্ডের জলে ভক্তদের দেখা দেন বাসুকি নাগ । এ চত্বরে কোনও মন্দির না থাকলেও খোলা আকাশের নিচে পাথরের বেদীতে বসানো আছে শিব – বিষ্ণু – বাসুকির প্রস্তরমূর্তি । 

কিস্তওয়ার (Kistowar) – 

এখানকার জলে নানান রোগের উপশম হয় । তাই আশপাশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত নাম কিস্তওয়ার । তবে কাশ্মীর ভ্রামণিকদের কাছে তত্রেটা পরিচিত নয় ছোট্ট পাহাড়ি শহরটি । সমগ্র কাশ্মীরের সৌন্দর্য রয়েছে এখানে । একাধিক জলপ্রপাত রয়েছে এ শহরকে ঘিরে । সুদর্শন পার্কও গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া সম্পন্ন কিস্তওয়ারে । শ্রীনগরে ও জাঁসকরে এখান থেকে ট্রেক করে যান অনেক ভ্রামণিকই ।

গুলমার্গ (Gulmarg) – 

অতীতে এইস্থানের নাম ছিল গৌরিমার্গ । উচ্চতা প্রায় ২,৭৩০ মিটার কিন্তু এখানে ফুটে থাকা অগণিত ফুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে সুলতান ইউসুফ শা স্থানটির নাম বদলে করে দেন গুলমার্গ । গুল অর্থে ফুল আর মার্গ হল উপত্যকা । ফুলের উপত্যকা বিশেষণে ভূষিত গুলমার্গের সৌন্দর্য প্রত্যেক বছর লাখো লাখো ভ্রামণিকদের পাগল করছে । প্রায় সারাবছরই এখানে নানান ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায় । বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বসন্তে ছোট্ট পাহাড়ি জনপদটি ফুলে ফুলে ভরে থাকে । শীতে গুলমার্গ শহর বরফে ঢাকা পড়ে যায় । শহরের কেন্দ্রবিন্দু গল্ফ কোর্স । আঠারো পয়েন্টের এই মাঠটি বিশ্বের উচ্চতম গল্ফ কোর্স । সারা গ্রীষ্মে এখানে খেলার আসর বসে । শীতে ( নভেম্বর – মার্চ ) কোর্স বরফে ঢাকা পড়লে স্কি খেলা শুরু হয় এখানে । স্কি শেখানোর স্কুলও আছে এখানে । জাতীয় শীতকালীন খেলাধুলার আসরও বসে এই মাঠে । পাইন , দেওদারের ছায়ায় পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুসম সুন্দর গুলমার্গের আকর্ষণ এমনই যে ভ্রামণিক মাত্রই তার মায়া কাটাতে পারেন না । অদুরেই গড়ে উঠেছে গন্ডোলা অর্থাৎ রোপওয়ে । পাঁচ কিমি দীর্ঘ রোপওয়ের মাধ্যমে গুলমার্গের যোগাযোগ পার্শ্ববর্তী শহর খিলেনমার্গের সঙ্গে ।

খিলেনমার্গ (Khilanmarga) – 

চারিদিকে বরফ আর বরফ দেখার জন্য শ্রীনগর অবস্থানকালে অবশ্যই ঘুরে আসা দরকার খিলেনমার্গে । নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে চোখ চালিয়ে দিতে পারেন মাইলের পর মাইল । দেখে নিতে পারেন বিশ্বের পঞ্চম উচ্চ পর্বত শৃঙ্গ নাঙ্গা পর্বত ( ৮১৩৭ মিটার ) সহ হরমুখ , গৌরিশঙ্কর , ত্রিশূলও । শ্রীনগর শহর , ডাল লেক , উলার , শঙ্করাচার্য পাহাড় , ঝিলামও দেখতে পাওয়া যায় প্রায় ৩৬০০ মিটার উচ্চ খিলেনমার্গ থেকে ।

সোনামার্গ (Sonamarg) – 

২৮০০ মিটার উচ্চতায় সোনামার্গ , শ্রীনগর থেকে ৮৪ কিমি দূরে । রাস্তাটা জোজিলা , দ্রাস , কারগিল হয়ে সোজা চলে গেছে লে । জানুয়ারী এপ্রিল এ অঞ্চল বরফে ঢাকা , বাকি সময় সবুজ ঘাসে ভরা । তুষারবৃত থাজ্ঞিবাস হিমবাহ দেখে মুগ্ধ হবেন । ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানোর সুযোগ , পাইন গাছ ঘেরা সোনামার্গ যাবার রাস্তাতেই রয়েছে সিন্ধুনদ ।

আহারবল (Aharabala) –

মোগল বাদশাহদের পছন্দের জায়গা আহারবলে পৌঁছে আপনারও ভালো লাগবে এখানকার পরিবেশ । পাহাড় থেকে নেমে আসছে বিষভ নদী , অনেকটা জলপ্রপাতের ঢঙে । আপেলবাগানে মোড়া আহারবল বিখ্যাত এই জলপ্রপাতের জন্য । সেতু পেরিয়ে দেখে নেওয়া যায় নদীর গভীর খাদ । অদুরে কাঙ্গওয়াট্রন নামের মনোরম জনপদ । ছবির মতো সুন্দর উপত্যকায় চড়ে বেড়ায় গৃহপালিত পশুরা । এখানকার উষ্ণ জল প্রস্রবণটিও দেখার মতো । আর আছে প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি কৌনসারনাগ লেক ।

পামপুর (Pampur) – 

জাফরান চাষের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত পামপুর । এছাড়া স্পেনের বিশেষ বিশেষ স্থানে চাষ হয়ে থাকে জাফরান । জাফরান গাছের ফুলগুলি দেখার মতো । মনে কেমন যেন আগুন লাগায় । এখান থেকে ৩৫ কিমি দূরে সংগ্রামায়ও ঘুরে নেওয়া যেতে পারে । সেখানে পাহাড়ের গায়ে থাকে থাকে সাজানো উইলো কাঠের ক্রিকেট ব্যাট ।

অনন্তনাগ (Anantnag) –

পাহাড় থেকে অঝোর ধারা নেমে আসছে এখানে । দু পাশে রয়েছে দুটি কুণ্ড । একটির জল গরম ও একটির জল ঠাণ্ডা । হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এইস্থান । ভক্তরা বিশ্বাস করেন বড়ো কুণ্ডটিতে বিষ্ণুর প্রিয় অনস্তনাগ বাস করে । কুণ্ডদুটির মাঝে রয়েছে শিব ও রাধাকৃষ্ণের মন্দির । 

কোকরনাগ (Kokarnag) – 

কোকর অর্থে মুরগি আর নাগ মানে সাপ । মুরাগ ও সাপের মেল বন্ধন ঘটেছে এখানে । পাহাড়ের গায়ে অজস্র মুরগির পায়ের ছাপ , সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে জলের ধারা । ধারাগুলি মিলিত হয়ে রূপ নিয়েছে ঝরনা । এখানকার জলে উপশম হয় নানান দুরারোগ্য ব্যাধি । পাশে সুদর্শন গোলাপ বাগিচা । গোলাপ ছাড়াও নানান ফুলের সমারোহ তাতে । সমুদ্রতট থেকে ২০১২ মিটার উচ্চতায় এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে যারপরনাই আনন্দিত হন ভ্রামণিকরা । পাইনে ছাওয়া মনোরম কোকরনাগে রাজ্যের বৃহত্তম ট্রাউট মাছের প্রজননকেন্দ্রটিও দেখে নিতে হয় ।

ডাকসুম (Daksum) – 

কাশ্মীরের অন্যতম শৈলাবাস ডাকসুম । এখানকার আবহাওয়ার গুণে অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন । সবুজ উপত্যকার মাঝ বরাবর বয়ে চলেছে ব্রিংহী নদী । ট্রেকাররা এখান থেকেই সোজা চলে যান কিস্তওয়ারে । ২৪৩৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ডাকসুম থেকে ট্রেক করে ১৩৩০ মিটার চড়ে সিলথন পাসেও পৌঁছাতে পারেন । মন চাইলে ডাকসুম থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজপারিয়া ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিটিও দেখে আসা যায় ।

ভাবন , মার্তণ্ড মন্দির (Bhavan, Martand Temple) –

স্থানীয় হিন্দুদের কাছে ভাবন অতি পবিত্র জায়গা । বেশ বড়ো মন্দির রয়েছে এখানে । আর আছে কুণ্ড । এই জলে স্নান করে অনেক ধর্মীয় রীতি সম্পাদন করেন স্থানীয়রা । এখান থেকে হাঁটাপথে পৌঁছানো যায় কারুকার্যময় মার্তণ্ড মন্দির । সূর্যদেবকে পুজো করা হয় এখানে । ধারণা , প্রায় দু হাজার বছর পুরানো মন্দির এটি । সংস্কার করেছিলেন রাজা লালিত্যদেব ( ৬৯৯-৭৩৬ ) । অনেকের ধারণা কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্যই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা । যাই হোক না কেন , আজ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত at হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মন্দির । ৮৪ টি স্তম্ভের দেখা মিললেও ৭৫ ফুটের চূড়োটি ধ্বংসপ্রাপ্ত । মাউন্ট মোড়ের কাছেই রয়েছে প্রাচীন গুহা মন্দির ‘ কুমজুভা ’ । গুহার মধ্যে স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাকমাইট দ্বারা নির্মিত বেশ কিছু শিবমন্দির রয়েছে । 

পহেলগাঁও- বৈশরণচঞ্চল (Pahelgaon- Vaisharanchanchal) –

লিডার ও শেষনাগ এর জলধারার সঙ্গমস্থলে এই পহেলগাঁও । কাশ্মীরে আগত ভ্রামণিকদের তালিকায় অবশ্যই পহেলগাঁও থাকা উচিত । উচ্চতা ২১৩০ মিটার । সমতলের মানুষেরা যে নৈসর্গিক দৃশ্যের কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন না এখানে সেটাই স্বচক্ষে দেখা ও অনুধাবন করা যায় । পাহাড়ি শহরটাকে ঘিরে রেখেছে ১২ টি বৃহদাকার পর্বতশৃঙ্গ । হিমালয় পর্বতমালার এই শৃঙ্গগুলিতে সবসময়ই বরফ থাকে । অন্তত একটা রাত সুন্দরী পহেলগাঁওতে না কাটালে কাশ্মীর ভ্রমণ অনেকাংশেই বৃথা হয় । পূর্ব ও পশ্চিম লিডারের মিলন ঘটেছে এখানে । সারা শহরকে দুভাগে ভাগ করে দিয়েছে লিডার নদী । দু পাড়ে গড়ে উঠেছে দোকানপাট , বাড়িঘর , হোটেল । ট্রাউট মাছ ধরার সুযোগও রয়েছে এখানে । মাত্র শখানিক টাকা খরচ করে মাছ ধরার নেশা মেটানো যায় । এখানে অবস্থানকালে নয় পয়েন্টের গলফ কোর্সটিও দেখে নেওয়া যায় । অদূরে রাজা জয় সিংহের তৈরি মামলেশ্বর শিবমন্দির । পাথরের এই মন্দির লাগোয়া কুণ্ডটিও দর্শন করা যেতে পারে । আরও কিছুটা এগিয়ে আরু নামের সুদর্শন জায়গাটি ঘুরে নেওয়া যায় ।

   শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে ঘাসে ভরা বৈশরণ । এখান থেকেও হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি দেখতে পাওয়া যায় । পেছনে ফেলে আসা পহেলগাঁও ও লিডার নদী দেখতে এখান থেকে বেশ ভালো লাগে । আরও ১০ কিমি এগোলে পাওয়া যায় জলে টলটলে তুলিয়ান লেক । লেকে প্রতিচ্ছবি পড়ে বরফ শৃঙ্গগুলির । জলেও ভাসতে থাকে শুভ্র বরফ । পহেলগাঁও থেকে সামান্যদূরে একেএকে দেখে নিন প্রায় দেড় কিমি দূরে মমলেশ্বর শিবমন্দির , বেতাব ভ্যালি ( ৭ কিমি ) , চন্দনবাড়ি ( ১৬ কিমি ) । বেতাব ভ্যালি চলচ্চিত্রের শ্যুটিং স্পট হিসেবে প্রসিদ্ধ । শেষনাগ থেকে বয়ে আসা নদী উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে । অসাধারণ এর সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে । চন্দনবাড়ির উচ্চতা ২৮৯৫ মিটার । এর প্রসিদ্ধ তার প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য।

আরু (Aru) – 

পহেলগাঁও থেকে নানাদিকে ট্রেকের সুযোগ রয়েছে । কোলাহাই হিমবাহের দিকে সাড়ে এগারো কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছানো যায় আরু নামের জনপদে । ২৯৬০ মিটার উচ্চ এই পাহাড়ি গ্রামে বসবাস করেন গুর্জর সম্প্রদায়ের মানুষজন । হিমালয়ের সুবিশাল ক্রোড়ে কিছুটা সময় নিরিবিলিতে কাটিয়ে নেওয়া যায় । সঙ্গী ভ্রামণিকের সঙ্গে যেন কথাও বলতে ইচ্ছে হয় না এখানে গিয়ে । কেবলই মুগ্ধ দৃষ্টি শোষন করতে চায় দৃশ্য রস । এখানে আসার পথে দেখে নিন আপেল উইলো গাছে ঘেরা ক্লাব পার্ক , গল্ফ কোর্স , ল্যাভেন্ডার পার্ক , লিডার ভ্যালি অ্যমিউজমেন্ট পার্ক , মিনি জু ইত্যাদি ।

নুব্রা উপত্যকা (Nubra Valley) –

লে শহর থেকে ৪০ কিমি পেরিয়ে পৌঁছন বিশ্বের উচ্চতম মোটরগাড়ি চলাচলকারী গিরিপথ ‘ খারদুংলা ’ ( ৫,৬০০ মিঃ ) । অনেকে এখান থেকে লে তে ফিরে যান । আপনি এই বোকামি না করে নুব্রার দিকে যান । আগে খারদুংলার আর্মি ক্যান্টিনে চা খেয়ে নিন । নুব্রা ও শিয়া –এই দুটি নদীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে লাদাখের সবুজ সুন্দর নুব্রা উপত্যকা স্থানীয় ভাষায় ‘ নুব্রা ’ মানে সবুজ । এই উপত্যকার বৃহত্তম গুম্ফা দিসটি গ্রামের মাথায় । এগিয়ে এসে হুন্ডায় রাত্রিবাস করুন । এখানেই লাদাখের বিখ্যাত মরু বালিয়াড়ির অবস্থান । আর বালির রং কাদা । ৩০৫০ মিটার উঁচু । দু – দুখানা কুঁজযুক্ত উটে চরে ঘুরে বেড়ান । চলুন তুর্ভুক গ্রামের দিকে । মুসলিম প্রধান এই গ্রামটি সাবেক বালুচিস্তানের অংশ । নুব্রা নদীর পাড়ে সুমুর গ্রাম , সামতানলিং গুম্ফা ও পালামিক উষ্ণ প্রস্রবণ আছে । কয়েক দিন হাতে নিয়ে গেলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শরীর অসুস্থ হবার কারণ থাকে না । 

জোরায়ার সিং কোর্ট (Zorayar Singh Court) –

জোরায়ার ছিলেন কাশ্মীররাজ গোলাব সিংহের সেনাপতি , যাকে বলা হয় ভারতবর্ষের অন্যতম যুদ্ধ কুশলী । ঊনবিংশ শতাব্দিতে তিনি লাদাখ জয় করে কাশ্মীরের সাথে যুক্ত করেছিলেন , সেই থেকে লাদাখ ভারতের ই অংশ , সেই বিজয় কাহিনি বর্ণিত আছে এই দূর্গে । 

শান্তিস্তপ (Santi stupa) – 

দিনের আলোয় যেখানেই থাকুন সন্ধ্যের আগে পৌঁছে যান শাস্তিস্ত্বপে । দেশ – বিদেশের ট্যুরিস্টরা আসেন এখানকার সুর্যাস্ত দেখতে ।

লিডারওয়াট (Leaderwatt) – 

আরুর পরে আরও সৌন্দর্য ভ্রামণিকদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে লিডারওয়াটে । সবুজের চাদরে ঢাকা এইস্থান পৌঁছাতে পারলে পথ চলার ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । ৩০৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লিডারওয়াটকে ঘিরে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা ৷ কাছাকাছি দ্রষ্টব্যগুলি হল পোশপাথরি , কুটপাথরি , কুত্তুরীওয়ান জায়গাগুলি৷

অমরনাথ (Amarnath) – 

দেবী পার্বতী অমরত্ব পাওয়ার আশায় মহাদেবের কাছে দরবার করলে এক নিরাপদ আশ্রয় সৃষ্টির সমস্ত রহস্য বর্ণনা করতে চায় জটাধারি । সেই নিমিত্তেই ত্রিশূলের খোঁচায় তৈরি করে ফেলেন অমরনাথ গুহা । বর্তমানে এটি ভারত রাষ্ট্রের অন্যতম হিন্দু তীর্থস্থান । দৈর্ঘ্যে ১৬ মিটার , প্রস্থে ১৫ মিটারের এই পাহাড়গুহার উচ্চতা প্রায় ১১ মিটার । গুহার শেষপ্রান্তে পাহাড়ের ছাদ চুইয়ে জল পড়ে তৈরি হয়েছে ৮ ফুটের বরফের শিবলিঙ্গ । উজ্জ্বল এই বরফ লিঙ্গ কোনও সময়েই গলে না । সাদার সঙ্গে কিছুটা নীলচে রঙ মিশেছে লিঙ্গে । পাশেই চোয়াজলে তৈরি হচ্ছে মহাগণেশ ও পার্বতীর মূর্তি । কথিত আছে , মহাদেব পার্বতীকে যখন সৃষ্টির রহস্য শোনাচ্ছিল তখন গুহার মধ্যে দুটি শুকপাখি উপস্থিত ছিল , তারা এখনও অবস্থান করছে এই গুহা অভ্যস্তরে । ভক্তদের ধারণা , অমরনাথ গুহার সন্ধান পায় মহর্ষি ভৃগু । তারই আদেশে কশ্যপ দ্বারা নির্বাচিত কাশ্মীরের রাজা তক্ষকনাগ সর্বপ্রথম দেখে এই শিবলিঙ্গ । অমরনাথের দুর্গম পথে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভৃগু তক্ষককে একটি মন্ত্রপুত ছড়ি দিয়েছিল । এই ছড়ি নিয়েই আজ হয় ছড়ি মিছিল । শ্রাবণ মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বাদশী তিথিতে শুরু হয় এই বিখ্যাত ছড়ি মিছিল । নুনওয়ান ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ছড়ি অর্থাৎ রৌপ্য দন্ডটি পরিচালকদের কাধে চড়ে যায় অমরনাথ গুহায় । পেছনে থাকে হাজার হাজর ভক্তের কাতার । ছড়ি মিছিলে নেতৃত্ব প্রদান করেন কাশ্মীর ধর্মার্থ সঙ্ঘের মোহান্ত । রাজা তক্ষকের পর বহুকাল এ পথে ভক্তদের আনাগোনা ছিল না । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হয়েছিল অমরনাথ । অষ্টম শতাব্দীতে গুরু শঙ্করাচার্যের নেতৃত্বে আবার শুরু হয় অমরনাথ তীর্থযাত্রা । আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে যায় এই ধর্মস্থান । অষ্টাদশ শতকে পুনরায় শিবলিঙ্গটি আবিষ্কার করেন আক্রমবাট মল্লিক নামের মুসলিম মেষপালক । অমরনাথ দর্শনের প্রধান সময় আষাঢ় মাসের গুরু পূর্ণিমা থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমার ১ মাস ( জুন – জুলাই ) । এ সময় গুহা যাওয়ার পথের দু ধারে সারিবদ্ধভাবে পুজোর সামগ্রীর দোকানপাট বসে।

   সামরিক ঘেরাটোপের মধ্যে দিয়ে পায়ে পায়ে । চলে ছড়ি মিছিল । আগে চলে রৌপ্যদণ্ড , ঠিক পেছনেই সাধুর দল , এর ঠিক পরেই দেখতে পাওয়া যায় নাগা সন্নাস্টীদের । আর তারও পেছনে থাকেন তীর্থযাত্রীরা । যাত্রার দিনান্ত আসে বিকেলে , ১৩ কিমি অতিব বন্ধুর পথ চলার পর । যাত্রা শুরুর তিন কিমির মধ্যেই আসে পিসু চড়াই । পিচ্ছিল পাহাড়ি চড়াইতে চড়তে অক্ষম ঘোড়াও , তাই লাঠি ধরে ধীরে ধীরে পায়ে হাঁটাই ভালো । পিসু চড়াই ওঠার পর পিসু টপে সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার প্রথা । তারপর চার কিমি সমতল ও পাঁচ কিমি চড়াই ভেঙে শেষনাগে বিশ্রাম । ছোট্ট পাহাড়ি লেকের ধারে ক্লান্ত মানুষদের অস্থায়ী কলোনী গড়ে ওঠে । কথিত আছে , সুত্রবসনাগ নিজে থাকার জন্য এই হ্রদটি খনন করেছিল । এখান থেকে সামান্য এগোলেই পাওয়া যায় ব্রহ্মা , বিষ্ণু ও মহেশ্বর পাহাড় । অনেকেই ১ ম রাতের আশ্রয় গ্রহণ করে বায়ুযানের বিশ্রামগৃহে বা যোজিবালে । দ্বিতীয় দিনে ছড়ি মিছিল । এগিয়ে মহাগুনাস পর্বত পাড় হয়ে বায়ুযান । সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে ওয়াব্যান । শ্বাসকষ্ঠের সমস্যাও হয় অনেকের । ছড়ি মিছিলের ইতিহাসে ঐতিহাসিক | স্থান এটি । ১৯২৮ – এ প্রচন্ড প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেড়ে নিয়েছিল হাজার হাজার তীর্থযাত্রীর প্রাণ । ১৯৯৬ – এও ঘটেছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । মহাগুণাস পার হলেই পাওয়া যায় উতরাই । এপথে আরও আট কিমি গিয়ে সেই দিনের জন্য যাত্রার ইতি টানা হয় পঞ্চতরণীতে । প্রাকৃতিক শোভায় সুসজ্জিত এখানকার পরিবেশ । পাঁচটি নদীর মিলন ঘটায় জায়গার নাম পঞ্চতরণী । নদীর পাড়েই বসে যাত্রী ক্যাম্প । ইচ্ছা করলে স্থায়ী বিশ্রাম ঘরেও থাকা যায়।পরদিন ভোর ৪ টেয় আবার হাঁটা শুরু । কিলোমিটার খানিকের মধ্যেই পড়ে ভৈরব ঘাট । তিন কিমি চড়াই চড়ে ৪১৫৪ মিটারে সন্তসিং টপ । আবার উতরাই ধরে আরও সাড়ে তিন কিমি যেতেই গন্তব্যে পৌঁছায় মিছিল । তবে অমরনাথ গুহায় প্রবেশ করতে হলে প্রায় পাঁচশটি খাঁড়া সিঁড়ি ভাঙতে হয় । অদূরে অমরাবতী নদী মিলেছে অমরগঙ্গায় । অনেকে সেখানে স্নান করে বা সেখানকার জল নিয়ে তীর্থস্থলে প্রবেশ করেন । হাঁটার অভ্যাস না থাকলে বা শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ঘোড়া , দান্ডি বা কান্ডি করেও সামিল হওয়া যায় মিছিলে । প্রয়োজনীয় মালবহনের জন্য কুলি ও খচ্চরের ব্যবস্থাও আছে এখানে । চন্দনবাড়ি বেসক্যাম্পে পৌঁছে সেখান থেকেও খচ্চর ভাড়া করে নেওয়া যায় । শুক্লপক্ষের দ্বাদশীর দিন ভোর চারটেয় ছড়ি মিছিল শুরু হয় বেসক্যাম্প থেকে । গুহার দূরত্ব ৩২ কিমি । মিছিলের সঙ্গে চলার ইচ্ছা না থাকলে চন্দনবাড়ি থেকে পঞ্চতরণী পথ ধরে সঙ্গম পৌঁছে সেখান থেকে বালতাল হয়ে মাত্র সাড়ে চোদ্দো কিলোমিটার হাঁটলে পৌঁছানো যায় মহাতীর্থে । 

মাতা ক্ষীরভবানী , গান্ধারবল , গঙ্গাবল – 

সতীর ৫১ পীঠের একটি এটি । পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী , সীতা হরণের পর রাবণের ওপর তুষ্ট হয়ে দেবী পার্বতী লঙ্কা ছেড়ে চলে আসেন তুল্লামুল্লা গ্রামে । পাণ্ডাদের বর্ণনা অনুযায়ী , তাঁদের পূর্বপুরষদের কাছে পথক্লান্ত এক মহিলা এসে আহার্য চান । পূর্ব – পাণ্ডারা তৎক্ষণাত গরুর দুধের ক্ষীর দেন মহিলা রূপী দেবী পার্বতীকে । এখানে পার্বতীর মন্দিরও গড়ে তুলেছিলেন রাজা প্রতাপ সিং । শ্বেতপাথরের ছোট্ট মন্দিরটির সামনে রয়েছে ক্ষীরসাগর নামের কুণ্ড ও অসংখ্য প্রস্রবণ । কাঠের পাঠাতন পার হয়ে মন্দিরে যেতে হয় । পাঠাতনে দাঁড়িয়েই ক্ষীরসাগরে দুধ দেওয়া হয় ভবানীর উদ্দেশে । স্বামী বিবেকানন্দ অমরনাথ দেখার পর এ মন্দিরেও এসেছিলেন ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে । জ্যৈষ্ঠ মাসে এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে তুল্লামুল্লাতে । অদূরে দুর্গা , বুদ্ধ ও মহাবীরের মন্দিরটি দেখে নেওয়া যেতে পারে । এখান থেকে শ্রীনগরের দিকে কিলোমিটার পাঁচেক এগোতেই পাহাড়ি গ্রাম গান্ধারবল । সিন্ধুভ্যালির সুন্দর রূপ দেখা যায় এখান থেকে । সিন্ধু নদ সমতলে নেমেছে এখানেই । গান্ধারবলে সিন্ধুভ্যালির সদর দপ্তরও বসেছে । এখানকার জল খাবার হজম করতে সাহায্য করে । গান্ধারবল অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় গঙ্গাবল । কাশ্মীরের হিন্দুরা এই লেকের জলেই অস্থি বিসর্জন করেন । শ্রাবণ মাসে এখানে তীর্থে আসেন ভক্তরা ।

  শ্রীনগর থেকে ২৭ কিমি দুরে ক্ষীরভবানী । সার্ভিস বাসে পৌঁছানো যায় গন্তব্যে । সেখান থেকে শ্রীনগরে ফেরার পথে পড়ে গান্ধারবল , শ্রীনগর থেকে দূরত্ব ২১ কিমি । আবার এখান থেকে ১৯ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছানো যায় গঙ্গাবলে । কনডাকটেড ট্যুরে বাসে চেপে বেড়িয়ে নেওয়া যায় উলার লেক , মানসবল লেক , মাতা ক্ষীরভবানী , গান্ধারবল ।

শোনমার্গ (Sonmarg) – 

সোনলি বাগিচা অর্থে শোনমার্গ । উচ্চতা ২৭৩০ মিটার স্থানীয় মানুষদের ধারণা এই উপত্যকায় কোথাও সোনালি জলের রূপ আছে যার কারণেই সোনা রঙা হয় শোনমার্গ । ঘাসের রঙের সঙ্গে অদ্ভুত কোরাস তৈরি করে শুভ্ররঙা পর্বত চঁড়োগুলি । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অতিপ্রিয় ছিল স্বাস্থ্যকর শোনমার্গ । তিব্বত থেকে আসা সিন্ধু নদের পাশে গড়ে ওঠায় সবুজের অভাব নেই এখানে । পাহাড়ি নদটি উৎসের এত কাছে দেখার সৌভাগ্যও কিছু কম নয় । সব মিলিয়ে এইস্থানের সৌন্দর্য দেখে শেষ করা যায় না । এখান থেকে পায়ে হেঁটে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে দেখে নেওয়া যায় খাজিয়ার হিমবাহ । বরফের চাদরে ঢাকা পুলের মাধ্যমে সিন্ধু পেরিয়ে যাওয়া যায় তারই উৎপত্তিস্থলের আরও কাছাকাছি । এই হিমবাহর গলা জলেই পুষ্ট আদিম এই নদ । হিমবাহ দেখতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করলে হয় না । খুব তাড়াতাড়ি এ সৌন্দর্য আপনাকে স্বমহিমায় আসতে দেবে না । শোনমার্গ অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় । পার্শ্ববর্তী কিছু বিশেষ ভ্রমণকেন্দ্র । 

বিনসর লেক (Binsar Lake) – 

শোনমার্গ থেকে অদূরে ৪০৮৪ মিটার উচ্চতায় বিনসর হ্রদ । ভ্রামণিকদের মনে এখানকার নিখুঁত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকে না । নিচিনাম পাস হয়ে যাওয়া পথটিও মনোরম । 

কৃষ্ণসর লেক (Krishnasara Lake) – 

বিনসর লেকের পাশেই কৃষ্ণসর হ্রদ । তবে উচ্চতা কিছুটা কম । একই সূত্রপাতে দেখে নেওয়া যায় শোনমার্গ , খাজিয়ার হিমবাহ , বিনসর লেক ও কৃষ্ণসর লেক । 

নীলাগ্রাড – 

বাল্টি উপজাতির মানুষের বাস এই উপত্যকায় ৷ শোনমার্গ থেকে ছয় কিমি পথ পেরিয়ে নীলাগ্রাডে খরস্রোতা এক পাহাড়ি নদী মিশেছে সিন্ধুতে । পাহাড়ি নদীর রক্তিম জল বাল্টিকদের কাছে খুবই পবিত্র , নানান রোগের উপশমও হয় এই জলে । স্থানীয় মানুষেরা সকলেই রবিবার করে এই নদীর জলে স্নান করেন।

  শোনমার্গের দূরত্ব শ্রীনগর থেকে ৮৪ কিমি । বাস চলে এ রাস্তায় । ট্যাক্সিতেও যাওয়া যায় শোনমার্গে । সময় লাগে তিন- সাড়ে ৩ ঘণ্টা । সারাদিনের জন্য পুরো গাড়িভাড়া খরচ পড়বে ২৯০০-৩৫০০ টাকা । ৩ কিমি দূরে খাজিয়ার হিমবাহ দেখার জন্য হাঁটাই একমাত্র ভরসা । ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিছুটা পথও যাওয়া যায় ৷ তবে ব্রিজ পার হয় না ঘোড়া । 

যুসমার্গ , চারার – ই – শরিফ – 

মনোরম পরিবেশের আরও এক নিদর্শন শ্রীনগরের অদূরে অবস্থিত যুসমার্গ উপত্যকা । পশুচারণক্ষেত্র হিসেবে ফার ও পাইন গাছে ছাওয়া এইস্থানের যথেষ্ট খ্যাতি আছে । হাতে সময় থাকলে এই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এক বা দু দিন কাটানো যেতে পারে । দুধগঙ্গানদী নয়নাভিরাম সবুজ উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে । অদূরে অবস্থিত হে জন দরগা , নীলানাগ লেকটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে অল্প সময় খরচ করে । শ্রীনগর থেকে যুসমার্গ যাওয়ার রাস্তায় পড়ে চারার – ই – শরিফ । শ্রীনগর থেকে দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার । সুফী শেখ নুরুদ্দিন ওয়ালিয়া শায়িত আছেন এখানে । সম্রাট জাইনুল আবেদিন এখানেই তৈরি করান কাঠের মাজার । এই সৌধকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে চারার শহর । ১৯৯৫ – এ জঙ্গি হানায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় চারার – ই – শরিফ । সারা শহরের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় । কাশ্মীরের কর্মঠ মানুষরা আবার সাজিয়ে তুলেছেন শহর ও মাজার । যুসমার্গ দর্শন করে ফেরার সময় ঝটিতি দেখে নেওয়া যেতে পারে পবিত্র মাজার শরিফ । 

দাচিগাম ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি – 

জঙ্গলপ্রেমী ভ্রামণিকদের জন্য কাশ্মীরের নতুন ঠিকানা দহিগাঁও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি । অতীতে রাজারা এখানে মৃগয়া করতে আসতেন । শোনমার্গের উত্তর – পূর্ব দিকে অবস্থিত এই অরণ্যের উচ্চতা ১৬৯২ থেকে ৪২৮৯ মিটার । ফলে বিভিন্ন ধরনের গাছ এখানে দেখতে পাওয়া যায় । উদ্ভিদ ছাড়াও সহজেই দর্শন মেলে চিতাবাঘ , কালো ও বাদামি ভালুক , কাশ্মীরি স্ট্যাগ , হরিণ প্রভৃতি বন্যপ্রাণির । পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী আরও সুন্দর করে তুলেছে স্যাংচুয়ারিটিকে । রবিবার ছাড়া যেকোনও দিন ২০ টাকার বিনিময়ে রিসেপশন সেন্টার থেকে ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেনের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখা যায় অরণ্য । 

লাডাক (Ladak) : 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর লাডাকের ইতিহাস অতি প্রাচীন ও বর্ণময় । বেশ কয়েক হাজার বছর ধরে যাযাবরদের বাস ছিল এখানে । চীনা তীর্থযাত্রী হুই | চাও – র বিবরণ থেকে জানা যায় , সপ্তম শতাব্দীতে হ সম্প্রদায়ের বাস ছিল এখানে । পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ অবশ্য বাসিন্দাদের কোনও বর্ণনা দেননি । তিনি এইস্থানকে লালভূমি বলে উল্লেখ করেছেন । বিভিন্ন নথিতে পাওয়া যচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের । এই প্রদেশের আদি নাম ছিল কাঞ্চাপা , পরিবর্তীত হয়ে রিপুল , আরও পরে লাডওয়াক এবং সবশেষে লাডাক । গিরিবর্তর দেশ লাডাকে একটি জাতি বা উপজাতির বাস গড়ে উঠেছে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে । বর্তমান জাতিটি বালতিস্তানের দর্দ উপজাতি , মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলিয়ান ও ভারতের মন উপজাতির মিশ্রণে তৈরি । এরা এখন লাডাকি নামে পরিচিত ।

   তাই শাসনের অবসান ঘটলে ৮৪২ – এ লাডাক যায় লাচেন রাজাদের হাতে । প্রথম রাজা ডেনিমাগনেরের মৃত্যুর পর তাঁর রাজত্ব তিন ছেলের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় । পালজিমাগনের ভাগে পড়ে লাডাক । তিনি কাশ্মীর ও তিব্বত থেকে স্থপতিদের আনিয়ে লাড়াককে সাজাতে শুরু করেন , তাঁরই আমলে প্রথম গুম্ফাটি তৈরি হয় এখানে । লাডাককে একাধিক প্রাসাদ উপহার দেন রাজা নাগলুপ ৷ ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বৌদ্ধধর্মের রাজত্ব শুরু হয় এখানে । শতাব্দীর শেষের দিকে রাজা নোরুবগণের সময় এখানেই রচিত হয় বৌদ্ধ পুঁথি কান্দসুর । তাঁরই পুত্র রিনচেন ধর্মান্তরীত হয়ে মুসলিম হন । তিনি কাশ্মীর উপত্যকা দখল করে রাজ্যের সীমানাও বাড়িয়েছিলেন । তিনিই কাশ্মীর তথা লাডাকের প্রথম মুসলিম শাসক । সুলতান সদর – উদ্দিন নামে ১৩২৪-২৭ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেছিলেন । ১৫৩৩ – এ মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে সোয়াং নামগয়াল রাজা হন । রাজধানী লে – তে একের পর এক প্রাসাদ , মন্দির , সেতু ও সড়কপথ গড়েন তিনি । রাজ্যের পরিধিও বৃদ্ধি করেছিলেন তিনি । তাঁর মৃত্যুর পর ভাই জামইয়াং নামগয়াল রাজা হন । স্কার্দুর রাজা আলি শেরের মেয়ে খাতুনের সঙ্গে বিবাহ হয় জামইয়াং – এর । লে তথা লাডাকের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ এটি । তাঁদের সন্তান সিঙ্গে নামগয়াল রাজত্ব লাভ করেন ১৬১০ – এ । রাজা হিসেবে সিঙ্গে নানান কৃতিত্বের নিদর্শন রেখেছেন । স্পিতি , মানস সরোবর ও কৈলাস পর্বত পর্যন্ত রাজ্যের প্রসার ঘটানো , বালতিক ও মোগল যুগ্ম বাহিনিকে পরাস্ত করা ছাড়াও সমগ্র রাজ্যে অসংখ্য গুম্ফা , মণিওয়াল ও চোর্তেন গড়েন । এই বংশের রাজত্বকালেই প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠে এখানে । ১৬৭৯ – এ তিব্বত রাজ লাডাকের ওপর চড়াও হলে মোগল সেনাদের সহযোগিতায় রাজা ডেলডন নামগিয়াল জয়ী হন । পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন । কিন্তু প্রজারা কেউই ধর্মান্তরীত হননি । ১৬৮৪ – তে মঙ্গোলিয়ানদের কাছে পরাস্ত হলে তিব্বত দখল নেয় লাডাকের ওপর । কাশ্মীরের সহযোগিতায় তিব্বতের হাত থেকে রক্ষা পায় লাডাক । তেমিসগাম চুক্তি অনুসারে বাৎসরিক ৭০০০০ টাকা ভাতার বিনিময়ে কাশ্মীরের অধীনে আসে লাডাক । এরপর রনজিৎ সিংহের শাসনকাল । তারপর গুলাব সিং চতুরতার সহিত তেমিসগাম চুক্তি লঙ্ঘন করে লে আক্রমণ করেন ও লাডাক দখল করেন । স্বাধীনোত্তর কালে পাকিস্তান দখল নিতে চাইল লাডাক ও কাশ্মীর । অন্যদিক থেকে চীন এগিয়ে এল তিব্বত দখল করতে । ১৯৬২ – র যুদ্ধের সময় চীন লাডাকের কিছুটা অংশ দখলও করে নিয়েছিল । এখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদা মোতায়েন রয়েছে লাডাকে । পাকিস্তান ও চীনের হাত থেকে লাডাককে বাঁচানোর জন্য তৎপরতার অভাব নেই জওয়ানদের ।

   তিব্বতীয় জীবনযাপনের রীতিনীতি এখনও বর্তমান লাডাকে । ১৯৫৯ – এ চীন তিব্বতের দখল নিলে বহু সংখ্যক তিব্বতীয় বাসস্থান ছেড়ে লাডাকে চলে আসেন । সেই থেকে এইস্থানকে মিনি তিব্বতও বলা হয়ে থাকে । দলাই লামাকেই এখানকার মানুষেরা গুরু বলে মানেন । মহাযানপন্থী বৌদ্ধ ছাড়াও এখানে কিছু সংখ্যক মুসলিম ধর্মাবলম্বীও বসবাস করেন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এখানে ভ্রামণিকদের প্রবেশ নিষেধ ছিল । ১৯৭৪ – এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় । এখন সহজেই ভ্রামণিকরা ঘুরে নিতে পারেন প্রাকৃতিক অপরিসীম সৌন্দর্যের মাঝে । তবে এ প্রদেশের বেশিরভাগ অংশই অগম্য । জনবসতিও নেই সেখানে । জুন থেকে সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকাল আর বাকি সময়টা অত্যস্ত শীত , বৃষ্টি হয়না এখানে । সিন্ধু নদ এখান দিয়েই বয়ে চলেছে সমতলের দিকে । লাডাকের উত্তর দিকে কারাকোরাম পর্বতমালা আর দক্ষিণে হিমালয় পর্বতমালা পেরিয়ে সীমানা গড়েছে পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশে । জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লে ও কারগিল দুটি জেলা রয়েছে লাডাকে । লাডাক ভ্রমণে অবশ্য দর্শনীয় স্থানের নাম ও বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল ।

লে (জম্মু ও কাশ্মীর) :

 অতীতের রাজধানী আজ হয়েছে জেলাসদর । কারাকোরাম পর্বতের ৩৫২১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটি গড়ে উঠেছে লে ওয়েসিসকে কেন্দ্র করে । চারদিক থেকে শহরকে ঘিরে রেখেছে সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ । এখানে থাকার সময় দেখে নিতে হয় লে মনাস্ক্রিটি । পাহাড়ের গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাড়িগুলিতে বসবাস করেন বেশিরভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ । আর আছেন কিছু খ্রিস্টধর্মীয় । শহরকে চিরে দিয়ে চলে গেছে মূল সড়ক । তারই দুপাশে গড়ে উঠেছে হাজারো দোকানপাট । দোকানীদের বেশিরভাগই মেয়ে । ঝলমলে কুনটুপ ও পেরাক টুপিতে ও নানান ভূষণে সুসজ্জিত থাকেন মেয়েরা । আর ছেলেরা পরেন জোব্বার মতো গৌচা । জুলাই থেকে আগস্ট গ্রীষ্মকাল এখানে । এসময় প্রায় ১৪ ঘন্টা ধরে সূর্য অবস্থান করে লাডাকে । জুন থেকে সেপ্টেম্বর বসন্তকাল । সমতলের মানুষের জন্য এসময়টাই লাডাক দেখার উপযুক্ত সময় । সমগ্র লে শহর এ সময় উৎসবে মেতে ওঠে । নাচ – গান – বাজনায় ভরপুর হয় তিরন্দাজি উৎসব । এছাড়াও ৬ জুলাই দলাই লামার জন্মদিনের উৎসব পালিত হয় মহাধুমধামের সঙ্গে । দুদিনে এই উৎসবও নাচ – গান – বাজনা – খাওয়াদাওয়ায় ভরপুর । দুটি দেবতার উপাসনা হয় দুদিনে । সমগ্র লাডাক জুড়ে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মনাস্ট্রি থেকে মনাস্ট্রিতে উপাসনা চলে এ দু দিন । উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ রকমারি মুখোশ পরিহিত ছাম নৃত্য । সম্প্রতি সরকারের উদ্যোগে মে – জুন মাসে লে শহরকে কেন্দ্র করে সিন্ধু দর্শন উৎসব শুরু হয়েছে । সমগ্র লাডাক থেকে মানুষরা আসেন লে শহরে এই উৎসবে সামিল হতে । লে চোখাং বৌদ্ধমন্দিরে শহরবাসী তাদের দিন শুরু করেন এই মন্দিরকে প্রদক্ষিণ করে । লে বাজার বিখ্যাত , কারণ বহুপূর্বে কাশ্মীর , তিব্বত ও মধ্য এশিয়ার ইয়ারকান্দ থেকে ব্যবসায়ীরা ঘোড়ার ক্যারাভ্যানে করে মাল আনত এখানে । এখানে থাকতে থাকতে ঘুরে নিতে পারেন দর্শনীয় স্থানগুলি । 

নেজের লাখো – 

লে তে থাকাকালীন একদিন আসুন সন্ধ্যেবেলা নেজের লাখো – তে । টিলার ওপর চৌকো সাদা স্তুপটি লে শহরের দেবতার সন্ধানে এই স্তুপটি প্রতিষ্ঠিত । 

তিব্বতীয় মার্কেট – 

কলকাতা বা অন্যান্য শহরের মতো এই জেলা সদরেও কেনাকাটির ক্ষেত্রে চলে তুমুল দরাদরি । হেন কোনও জিনিস নেই যা এই বাজারে পাওয়া যায় না । লাডাক বেড়ানোর স্মৃতি স্বরূপ এখান থেকে কিনে নেওয়া যেতে পারে লাডাকবাসীদের পোশাক , টুপি , হস্তশিল্পের মতো দ্রব্যাদি । 

লে রাজপ্রাসাদ – 

শহরের শেষপ্রান্তে রাজা সিঙ্গে নামগয়ালের কাজ শুরু হয় রাজা সোভাং নামগয়ালের সময় ) তৈরি নয়তলার রাজপ্রাসাদ । তিব্বতের পোতোলা রাজপ্রাসাদের অনুকরণে তৈরি এই বাড়িটি তুমুল ক্ষতিগ্রস্থ হয় গুলাব সিং – এর আক্রমণে । বর্তমানে প্রাসাদটি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তরের মালিকানাধীন । সকাল ৬.০০-৯.০০ ও বিকেল ৫.০০-৭.০০টার মধ্যে লে রাজপ্রাসাদে ঢুকে দেখে নেওয়া যায় রাজাদের ব্যবহার করা নানান জিনিসপত্রের সংগ্রহ । 

রেড গুম্ফা (Red Cave) – 

রাজপ্রাসাদের মাথার ওপর পাহাড়ের চূড়োয় রেড গুম্ফা দাঁড়িয়ে আছে ১৪৩০ থেকে । বিশালাকার বুদ্ধ মূর্তিটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ । এছাড়া দেখতে পাওয়া যায় থঙ্কাস , পুঁথি , পাণ্ডুলিপি ও নানান ছবির সংগ্রহ । কিছুটা সময় হাতে নিয়ে সকাল ৭.০০ থেকে ৯.০০ টার মধ্যে রেড গুম্ফা দেখে নিতে হয় । গুম্ফার উঠোন থেকে লে শহরের টপ ভিউ দেখে নেওয়া যেতে পারে । অদূরের আরেক রাজপ্রাসাদ স্টকটিও দেখে নেওয়া যায় একই সঙ্গে । 

শঙ্কর গুম্ফালে –

লে শহরে অবস্থানকালে পায়ে পায়ে হেঁটেই দেখে নেওয়া যায় শঙ্কর গুম্ফা । অসংখ্য সোনার তৈরি মিনিয়েচার মূর্তি রয়েছে এখানে । এছাড়াও রয়েছে ১১ টি মাথা ও ৫০০ জোড়া চোখের অবলোকিতেশ্বর আর ৫০০ জোড়া হাত – পায়ের অদ্ভূত বুদ্ধ মূর্তি । এখানকার উপাসনালয়টিও দেখার মতো । শঙ্কর গুম্ফার ওপর থেকে রাতের লে শহরকে দেখতে বেশ ভালোই লাগে । 

ইকোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার –

লাডাকের প্রাকৃতিক সম্পদ , সংস্কৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে হলে চলে যেতে হবে ইকোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে । বিশালাকার লাইব্রেরিও রয়েছে এখানে । দেখে নেওয়া যায় সোলার এনার্জির ওপর গবেষণালব্ধ ফলাফল । সপ্তাহের তিন দিন ‘ লার্নিং ফ্রম লাডাক ‘ নামের তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থাও রয়েছে । অদুরেই সিএটিএস – এ প্রতি সন্ধ্যায় বসে লাডাকি সংস্কৃতির আসর ।

   ১৫৯৪ – এ তৈরি মসজিদ , নিউ মনাস্ট্রির সোনার বুদ্ধ মূর্তি , রাজগিরের আদলে তৈরি শান্তি স্তূপ ও মণিওয়াল দেখে নেওয়া যায় একই দিনে ।

হেমিস গুম্ফা (Hemis Cave) – 

শহর থেকে ৪৩ কিমি দূরে অবস্থিত এই গুম্ফাটি দ্রুকপা সম্প্রদায়ের । ১৬৩০ – এ সিঙ্গে নামগয়াল তৈরি করান বিশালাকার এই গুম্ফাটি । লাডাকের গুম্ফাগুলির মধ্যে বৃহত্তম । এই গুম্ফাটির মধ্যে রয়েছে একাধিক মন্দির ও মূর্তি । সোনার জল করা মন্দির , শাক্যমুনিরূপী বুদ্ধের মূর্তি ও চারপাশের রুপোর চোর্তেন বিশেষভাবে ভ্রামণিকদের আকর্ষণ করে । ধর্মীয় গুরু রামপোচের মূর্তি রয়েছে উপাসনালয়ে । হেমিস গুম্ফার দেওয়ালগুলি নানান চিত্রে ভরপুর । প্রধান লামার সহস্র মুখ ও হাতের মূর্তিটিও অসাধারণ । গুম্পার লাইব্রেরিটি অসংখ্য মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ও পুঁথিতে ভরপুর । ১৮৮৭ – তে রাশিয়ার মানুষ নটোভিচ এখানকার পুঁথি ঘেটে আবিষ্কার করেন নাথ সম্প্রদায়ের সাধুদের সঙ্গে এসে যিশুখ্রিস্ট এখানেই বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হয়েছিলেন । হেমিসের থঙ্কাসের সংগ্রহ অনবদ্য । বিশ্বের বৃহত্তম থঙ্কাসটিও রয়েছে এখানে । এটি দেখার সুযোগ মেলে প্রতি বারো বছর অন্তর মহোৎসবের সময় । ২০১৬ – তে পুনরায় দেখতে পাওয়া যাবে বিশালাকার রঙিন থঙ্কাসটি । অদুরে ১৩ শতকে তৈরি গোতসাঙ গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া যায় । গুরু গোতসাঙ পা গুম্ফাটি তৈরি করিয়ে এই পাহাড়েই ধ্যানে বসেছিলেন । তাঁর হাত ও পায়ের ছাপ রয়েছে এই বৌদ্ধ তীর্থস্থানটিতে । এখানকার ছাপা ধর্মীয় শাস্ত্র আজ লাডাকের সমস্ত গুম্ফাতেই যাচ্ছে । 

স্পিটাক গুম্ফা (Spitak Cave) – 

কদম – পা সম্প্রদায়ভুক্তরা একাদশ শতাব্দীতে এই গুম্ফা প্রস্তুত করালেও ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে এটি গেলুগ – পা সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে পরিণত হয় । এখানে সংরক্ষিত থঙ্কাস , প্রেয়ার প্ল্যাগ , দুষ্প্রাপ্য পুঁথি দেখার সুযোগ মেলে । অদূরেই রয়েছে নতুন তৈরি গুম্ফা । জানুয়ারি ২৮ ও ২৯ – এ এখানে জমকালো উৎসব হয় ৷ গুম্ফা ছাড়াও এখানে তিনটি মন্দির রয়েছে । উৎসবকালে সেজে ওঠে মন্দিরগুলিও । 

ফিরাং গুম্ফা (Firang cave) – 

পাঁচটি গুম্ফা এক জোটে রয়েছে ফিরাং – এ । এখানেই রয়েছে ৯০০ বছরের প্রাচীন সংগ্রহশালা । অনবদ্য এই সংগ্রহশালায় দেখতে পাওয়া যায় চীনা , মঙ্গোলিয়ান ও তিব্বতীয় অস্ত্রের বিপুল সম্ভার । গুম্ফার আটটি দেওয়াল সজ্জিত হয়েছে বুদ্ধের অষ্টমার্গ দ্বারা । গুম্ফাস্থিত বৌদ্ধ মূর্তিটি খুবই সুন্দর । অদূরের ফিরাং হ্রদটিও দেখে নেওয়া যায় একই সুযোগে । কিভাবে যাবেন লে থেকে ১৭ কিমি দুরস্থ ফিরাং যাওয়ার বাস পাওয়া যায় । কোথায় থাকবেন সকালে বেরিয়ে ফিরাং দেখে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসা যায় লে শহরে ।

থিকসে গুম্ফা (Thikse Cave) – 

লাডাকের আরও এক আকর্ষণ পাহাড়ের চূড়োয় অবস্থিত ১২ তলার থিকসে গুম্ফা । এটিই এপ্রদেশের সবথেকে বেশি কারুকার্যমণ্ডিত গুম্ফা । অন্যান্য বৌদ্ধ উপাসনালয়ের মতো এখানেও রয়েছে থাঙ্কাস , দেওয়ালচিত্র ও লাইব্রেরি । আর আছে সুবিশাল বুদ্ধ মূর্তি । প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই গুম্ফায় সম্প্রতি আটটি নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে , যাতে শোভা পাচ্ছে নানান দেবদেবীর মূর্তি । অদূরে মাথো গুম্ফাটিও দেখে নেওয়া যায় একই সঙ্গে । 

তাক তোক গুম্ফা – 

জনশ্রুতি এখানেই ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন গুরু পদ্মসম্ভবা । ব্রাকথোক নামেও খ্যাত এই গুম্ফাটি নিংমা সম্প্রদায়ের একমাত্র উপাসনালয় । বসেছে তন্ত্রসাধনায় মগ্ন পদ্মসম্ভবা ও অন্যান্য নানা দেবদেবীর মূর্তি । দেওয়াল চিত্রে ধরা পড়েছে নানা আখ্যান । লে থেকে তাক তোেক যাওয়ার পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে ছেমরে গুম্ফা । 

স্টোক প্যালেস (Stoke Palace) – 

একদা রাজপ্রাসাদ থাকলেও আজ এখানেই বসেছে সংগ্রহশালা । প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন এই প্রাসাদের দ্বার সাধারণের জন্য রুদ্ধ । ২০ টাকার বিনিময়ে প্রাসাদের একাংশের সংগ্রহশালাটি দেখে নেওয়া যেতে পারে নির্দিষ্ট সময়ে লে থেকে স্টোক প্যালেস যাওয়ার পথটির শোভা দেখার মতো । সিন্ধুর উপর দিয়ে চোগ – লামসারের সেতু পেরিয়ে যেতে হয় প্যালেস দেখতে ।

শ্যে প্যালেস , গুম্ফা –

রাজপরিবারের গ্রীষ্মাবাস ছিল এখানে । পরবর্তীকালে ( ১৬৪৫ ) ধর্মগুরু লাচেন ডপল – গেভি – এমগন এর হাতে এখানে গুম্পা তৈরি হয় । এখানে সোনার তৈরি নানান জিনিস দেখা যায় । বিশেষভাবে উল্লেখ্য , বিজয়স্তূপের শীর্ষভাগ ও বুদ্ধের বিশালাকার মূর্তির বর্হিভাগ । এছাড়াও দেওয়ালে খচিত মূল্যবান রত্নের কারুকার্য । সকাল ৭.০০-১.০০ ও বিকেল ৫.০০ থেকে ৬.০০ টার মধ্যে দেখে নেওয়া যায় শ্যে প্যালেস ও গুম্ফা । 

আলচি গুম্ফা (Alchi Cave) – 

কাঠের তৈরি এই গুম্ফাটি লাডাক ভ্রমণকালে অবশ্যই দেখে নিতে হয় । প্রায় ১০০০ বছরের পুরোনো এই উপাসনালয়টিতে দেখতে পাওয়া যায় সহস্র হাত ও মাথা বিশিষ্ট অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি । দেওয়ালে তৈরি ফ্রেস্কোচিত্র ও কাঠের কারুকার্যে সমৃদ্ধ আলচি গুম্ফার অদুরে পাথরের তৈরি বাড়ির দেওয়ালে নানান বিন্দু দেবদেবী ও বুদ্ধর ছবি চিত্রিত wille ople রয়েছে । 

মুলবেক (Mulbeck) – 

প্রাকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক মুলবেত গ্রাম । এখান থেকে দাঁড়িয়েই দেখতে পাওয়া যায় নানা রঙের পাহাড় চূঁড়ো । সামান্য এগোতেই পাওয়া যায় গভীর খাদ , যার নিচ পর্যন্ত চোখ চালালে সমতলের মানুষের বুক কেঁপে ওঠে । চারিদিকে স্বচ্ছ সবুজ রঙের গাছপালা । পাহাড়ের চূঁড়োয় দুটি গুম্ফাও রয়েছে । কুষাণ যুগে পাহাড় কেটে তৈরি বুদ্ধের বিশালাকার মূর্তিটিও দেখে নেওয়া যায় মুলবেক অবস্থানকালে । প্রায় ২০০০ বছর আগে তৈরি এই চতুর্ভূজ মূর্তিটি বর্তমানে বিশ্বের উচ্চতম বুদ্ধ মূর্তি । মূর্তির পাশেই প্রার্থনাচক্রটি অবশ্যই দেখে নিতে হয় ।

লামায়ুরু (Lamayuru) – 

এখানেই রয়েছে লাডাকের প্রাচীনতম গুম্ফাটি । পাহাড় কেটে তৈরি এই গুম্ফাটি দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা । লামায়ুরুতে শীতের প্রকোপ খুবই বেশি । ফলে বাস থেকে নামতেই একটু জড়তা আসতে পারে ভ্রামণিকদের মধ্যে । কিন্তু এখানকার সৌন্দর্য জড়তা কাটাতে যথেষ্টই সাহায্য করে । গুম্ফার তলার এক ঘরে অবস্থানরত একাদশ শিবের মূর্তি ও অন্য ঘরের দ্বাদশ মুখের বৌদ্ধ মূর্তির নির্মাণ শৈলী ও নিপুণতা দেখে মুগ্ধ হতে হয় । অদূরে মুনল্যান্ড ভিউ পয়েন্ট থেকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি ও মণিদেওয়াল দেখে নেওয়া যায় । উল্লেখ্য , বাতাসের হাত থেকে শহরকে বাঁচাতে মণিদেওয়াল তৈরি করা হয়েছে । সামান্য দূরেই খালসেতে দেখে নেওয়া যায় সেনাপতি জোরাবার সিং – এর তৈরি দুর্গের ধ্বংসস্তূপ । পাথরে খোদাই করা ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠি শিলালিপিও দেখে নেওয়া যায় খালসেতে ।

কারগিল (Kargil) – 

একদা পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী ছিল কারগিল । অতীতে এ জেলা সদরের নাম খারখিল থাকলেও কালক্রমে তা হয়েছে কারগিল । নাকতুর , হোরকার ও ওরজন পাহাড় সদাজাগ্রত প্রহরির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে শহরকে ঘিরে । অতীতে খুবই তাবড় ভ্রামণিকরাই কারগিল নিয়ে মাতামাতি করতেন । কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে সমগ্র দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল কারগিলের ভারত – পাক যুদ্ধ । এ শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জেলার নামও কারগিল । জেলার মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার ( প্রায় ) । এখানে বসবাসকারী শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরা লাডাকি ও বালতিক মিশ্রণে তৈরি পুরিস ভাষায় কথা বলেন । ইংরেজিরও চল আছে এখানে । নানানরকম ফলের বাগানে সমৃদ্ধ কারগিলের খোবানি ভারত বিখ্যাত । কারগিল অবস্থানকালে দেখে নেওয়া যায় ইমামবাড়া বা ইকবাল মসজিদ । ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে রিসেপশন সেন্টার থেকে ভাড়া পাওয়া যায় ট্রেকিং এর জিনিসপত্র । ছোটো ছোটো ট্রেক করা যায় এখানে । এ শহর থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে পাকিস্তান সীমান্ত । ঘণ্টা খানেক পাহাড়ি গ্রাম্য পথে হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় আপার কারগিলেও । 

জাঁসকর উপত্যকা (Janskar Valley) – 

জাঁসকর লাডাক ভ্রমণকারী ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্য বিশ্বের অন্যতম শীতল স্থান জাঁসকর উপত্যকা । অনেকে কারগিল থেকে সরাসরি ট্রেক করে চলে আসেন জাঁসকর স্বর্গের মাঝে । এখানকার সৌন্দর্য সারাবিশ্বে খ্যাত । জাঁসকরে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া যায় নুন ও কুন পাহাড়কে । আশ্চর্যের বিষয় এই দুই পাহাড়ের উচ্চতা এক হওয়া সত্ত্বেও নুন বরফে ঢাকা আর কুন বরফহীন । এই উপত্যকার দু দিকে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয় ও জাঁসকর পর্বতশ্রেণি । এই উপত্যকার সদর শহর পাদুমও ঘুরে দেখে নেওয়া যায় ট্রেক করে । প্রায় ২০০০ লোকের বসতি পাদুমও সৌন্দর্যের দিক থেকে যথেষ্টই এগিয়ে । বৌদ্ধ ও সুন্নি মুসলমানদের বাস । বছরের প্রায় ৭ মাস এই উপত্যকা ঢাকা থাকে বরফে , শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । অদূরে সানি গুম্ফাটিও দেখা যায় জাঁসকর অবস্থানে । 

জম্মু ও কাশ্মীর প্রশ্ন ও উত্তর (Jammu and Kashmir Question and Answer / FAQ ):

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর রাজধানী কোথায়?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর রাজধানী শ্রীনগর ( গ্রীষ্মকালীন ) , জম্মু ( শীতকালীন )।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর আয়তন কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর আয়তন ২২২২৩৬ বর্গকিলোমিটার।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রতি বর্গ কিমি জনসংখ্যা কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রতি বর্গ কিমি জনসংখ্যা ১২৪ জন।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৩.৭১ শতাংশ (২০০১-২০১১)।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর সাক্ষরতার হার কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর সাক্ষরতার হার ৬৮.৭৪ শতাংশ।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রধান ভাষা কি?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর প্রধান ভাষা উর্দু (এছাড়াও কাশ্মীরি , লাডাকি , ডোগরি , পাঞ্জাবি , হিন্দি ও ইংরেজির চল আছে)।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর গড় বৃষ্টির পরিমাণ কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১০৫ সেমি।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এ নারী / পুরুষ অনুপাত কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এ নারী / পুরুষ অনুপাত ৮৮.৩ / ১০০ জন।

  1. জম্মু ও কাশ্মীর এর তাপমাত্রা কত?

Ans: জম্মু ও কাশ্মীর এর তাপমাত্রা শীতকালে তাপমাত্রা ০.৯ থেকে ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে ।

◆ আরও দেখুন :-

জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

আশা করি এই পোস্টটি বা ” জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir): ইতিহাস, জলবায়ু, ঐতিহাসিক স্থান, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *