Close Ad close
Breaking
Fri. May 10th, 2024
রাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Raksha Bandhan in Bengaliরাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Raksha Bandhan in Bengali

রাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Raksha Bandhan in Bengali

  রাখি বন্ধন উৎসব পালনের মূল উদ্দেশ্য হল ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসা এবং স্নেহের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা। এই উৎসবে, বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি বেঁধে দেয় এবং ভাইরা তাদের বোনদেরকে উপহার দেয়। রাখি বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমে বোনেরা তাদের ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়, আর ভাইরা তাদের বোনদেরকে ভালোবাসা এবং যত্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। 

  রাখি বন্ধন উৎসবের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী আছে। একটি কাহিনী অনুসারে, কৃষ্ণ তার ছোট বোন সুভদ্রাকে রক্ষা করার জন্য তার মায়ের কাছ থেকে একটি সুতো চেয়েছিলেন। সুভদ্রা কৃষ্ণের হাতে রাখি বেঁধেছিলেন এবং কৃষ্ণ তাকে রক্ষা করার শপথ করেছিলেন।

  চলুন দেখে নিই আজকের আলোচনা রাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Raksha Bandhan in Bengali নিচে দেওয়া হয়েছে।

রাখি বন্ধন উৎসব :

রাখি বন্ধন উৎসব হল একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং সুন্দর সংহতির উৎসব। এই উৎসবের মাধ্যমে ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসা এবং স্নেহের বন্ধন সুরক্ষিত এবং দৃঢ় হয়। এই শ্রীমতি উৎসব পরিবারের সদস্যগণকে একসাথে আনতে সাহায্য করে এবং সমাজকে একত্রিত করে মানবিক সম্পর্কের বন্ধন গড়ে তোলে। রাখি বন্ধন উৎসবে ভাইদের পাশাপাশি বোনরা নতুন পোষাক পরিধান করে এবং মিষ্টির মুখে হাসি দেখাতে ভাইদের হাতে পবিত্র সুতো বা রাখি বেঁধে দেয়। উত্তরাধিকারীতা রূপে ভাইরা বোনদেরকে উপহার দেয়।

রাখি বন্ধন উৎসব কবে পালিত হয় ? 

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শ্রাবণ মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। ২০২৩ সালে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হবে ৩০ এবং ৩১ আগস্ট।

রাখি বন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয় :

রাখি বন্ধন বা রাখি পূর্ণিমা ভারতে একটি পরিপ্রেক্ষিত উৎসব। প্রাথমিকভাবে, এই দিনটি ভাই-বোনের প্রেম এবং সহানুভূতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। দাদা বা ভাইয়ের ডান হাতের কবজিতে দিদি বা বোনেরা পবিত্র সুতো বেঁধে দেয় এবং এই মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভাতৃত্বের বন্ধন সুরক্ষিত হয়। এই উৎসবে দিদি বা বোনেরা তাদের ভাইদের জন্য মঙ্গলকামনা করে এবং সহানুভূতি প্রকাশ করে। হিন্দু পঞ্জিকায় শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তারিখে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবে ভারতের সব জাতি ও বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করে; তবে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুযায়ী এর প্রচলন বেশি। এখানে উল্লিখযোগ্য যে, এই উৎসব বর্তমানে দেশের সাথে বিদেশেও প্রচলিত হয়ে এসেছে।

বাংলায় রাখি বন্ধন উৎসব প্রথম কবে শুরু হয় :

ইতিহাসের কাছে জানা যায় যে, প্রথমবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে ১৯০৫ সালে রাখি বন্ধন উৎসব প্রথমবারে পালন করা হয়। এর পর থেকেই রাখি বন্ধন উৎসব প্রচলিত হয়।

বাংলায় রাখি বন্ধন উৎসব কে আনলেন :

রাখি বন্ধন উৎসব আনা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসব আয়োজন করেন। তারা কলকাতা, ঢাকা এবং সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই-বোনকে একত্রিত করেন এবং এই উৎসবের মাধ্যমে তাদের সহানুভূতি এবং ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করেন।

রাখি বন্ধন উৎসবের পৌরাণিক কাহিনী :

রাখি বন্ধন উৎসবের উৎপত্তি নির্ধারণ করতে পারার জন্য আমরা মহাভারতের কাহিনীতে তাকে অনুসন্ধান করতে পারি। মহাভারতে বর্ণিত, যখন একবার একটি যুদ্ধে কৃষ্ণের হাতে আঘাত লাগে এবং রক্তপাত শুরু হয়, তখন পাঁচপাণ্ডবের মহিলা দ্রৌপদী তার শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে নিজের হাতে বেঁধে দেয়। হয়তো তার এই কৃতিত্বে তিনি তার বোনের সম্মান রক্ষা করতে তার দায়িত্ব বুঝেন। এবং তারপরে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা দ্রৌপদীর মর্যাদার রক্ষা করা হয়, যা ভাই-বোনের সংবন্ধ এবং সহানুভূতির উদাহরণ হতে পারে, এইভাবেই রাখি বন্ধন উৎসবের উৎপত্তি ঘটে।

ঐতিহাসিক কাহিনী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :

২০শ শতকের প্রথম দশকে, জব ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন উন্নত পর্যায়ে পৌঁছল, তখন ব্রিটিশ শাসন বাঙালি সমাজকে দুটি ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নিল। তবে, এই বিভাজন কার্যকর করতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিবাদ প্রাদুর্ভাব হল বাঙালি সমাজে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং তীব্র বিবেকহীনতা। এই প্রস্তাবনা বন্ধ করার জন্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে রাখি বন্ধন উৎসব আয়োজন করেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা এবং সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই-বোনকে একত্রিত করেন এবং এই উৎসবের মাধ্যমে তাদের সহানুভূতি এবং একত্ব বৃদ্ধি করেন।

বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল
পুণ্য হউক পুণ্য হউক
পুণ্য হউক হে ভগবান।

বাংলার ঘর, বাংলার হাট,
বাংলার বন, বাংলার মাঠ
পূর্ণ হউক পূর্ণ হউক
পূর্ণ হউক হে ভগবান।

বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,
বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা
সত্য হউক সত্য হউক
সত্য হউক, হে ভগবান।

বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন,
বাঙালির ঘরে যত ভাই-বোন
এক হউক এক হউক
এক হউক হে ভগবান।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রাখি বন্ধনে গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা :

রাখি বন্ধনের আদিকালে গুরুজনের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা থাকতো। গুরুজনের শিক্ষা ও দর্শন বাংলা সমাজের জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এই শিক্ষা ও দর্শন রাখি বন্ধন উৎসবে সংকেত হিসেবে উপস্থাপন করা হত।

আধুনিক সময়ে রাখি বন্ধন :

রাখি বন্ধন উৎসবের আধুনিক রূপ এখনও উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকে। এই উৎসবের আধুনিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রচলনের মাধ্যমে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি পায়।

রাখি বন্ধনের আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব :

রাখি বন্ধন উৎসব একটি আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের উদাহরণ হিসেবে দাখিল হয়ে থাকে। দেশের বাইরে থাকা বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসব বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাখি বন্ধন উৎসবের গুরুত্ব :

রাখি বন্ধন উৎসব বাঙালি সম্প্রদায়ের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে থাকে। এটি বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসেবে বাঙালি সমাজে মূল্যাংকন হয়।

রাখি বন্ধন এর শুভেচ্ছা বা উক্তি | Raksha Bandhan Quotes in Bengali : 

  • “রাখি বন্ধন উৎসবের এই পবিত্র দিনে, আমাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সদায় অক্ষয় থাকুক।”
  • “ভাইয়া, আপনি যে আমার রক্ষক এবং সহায়ক, আমি সদা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। রাখি বন্ধন উপলক্ষে আপনাকে ভালোবাসি।”
  • “রাখির সুবর্ণ মোতি সহ যে বন্ধন আমরা ধারণ করি, তা আমাদের পরস্পর ভাই ও বোনের মধ্যে আমাদের সক্ষম করে তুলে।”
  • “আমি হৃদয়ের গহীন অনুভূতি দিয়ে বোনদের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করি। রাখি বন্ধন উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।”
  • “আপনি আমার অনমনীয় হয়ে থাকেন, আমি সদা এই রাখি উত্সবে ভালোবাসা এবং আভিমান বোধ করি। ভাইয়া, আপনির সাথে রাখি বন্ধন উপলক্ষে আমার শুভেচ্ছা রয়েছে।”
  • “রাখি বন্ধনের এই পবিত্র অবসরে, আমরা একে অপরকে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সমর্থন প্রদান করার স্বর্ণীম সুযোগ পেতে চাই।”
  • “রাখি বন্ধন উৎসবে আমার সহপাঠী হিসেবে আপনাকে এই উক্তি প্রেম এবং আদরে উপহার দেয়।”
  • “রাখির এই পবিত্র দিনে, আমরা ভাই-বোনের বন্ধন অনমনীয় মতো মজবুত করি এবং আমাদের সাথে থাকার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রতিবদ্ধ করি।”
  • “রাখি বন্ধন উপলক্ষে, আমি আপনার সহানুভূতি এবং আদর প্রকাশ করতে চাই। আপনি আমার জীবনের অমূল্য অংশ।”
  • “রাখির বন্ধনে আমরা বোন ভাই একটি অদ্বিতীয় আবেগ এবং সম্পর্ক স্থাপন করি, এটি আমাদের সম্পর্ককে মজবুত ও সমর্থনপূর্ণ করে।”

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: রাখি বন্ধন উৎসব | Raksha Bandhan FAQ :

১. রাখি বন্ধন উৎসব কোন দিনে পালন করা হয়?

রাখি বন্ধন উৎসব বাঙালি ক্যালেন্ডারে ভাদ্র মাসের পৌর্ণিমা দিনে পালন করা হয়।

২. রাখি বন্ধন উৎসবের ঐতিহ্য কতটুকু পুরানো?

রাখি বন্ধন উৎসবের ঐতিহ্য অন্তত চারশো বছরের পুরানো হতে পারে।

৩. রাখি বন্ধন উৎসবে বন্ধুত্বের প্রতীকতা কী?

রাখি বন্ধন উৎসবে রাখির মাধ্যমে বন্ধুত্বের প্রতীকতা প্রকাশ করা হয়।

রাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Raksha Bandhan in Bengali

আশা করি এই পোস্টটি বা রাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Raksha Bandhan in Bengali থেকে আপনি উপকৃত হবেন। এই পোস্টটি লেখার জন্য বিভিন্ন বই, ওয়েবসাইট, Google এই উৎসগুলো থেকে কিছু তথ্য সাহায্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন এরম তথ্য (রাখি বন্ধন উৎসব: কবে পালিত হয়, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী | Rabindranath Quotes in Bengali) সম্পর্কে জানতে এই The Famous Day ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *